সংবাদদাতা, হলদিয়া: থানার গারদের পাশে টিনের শেডে গোরুটি রেখেছিল পুলিস। চুরির মাল, তাই প্রকৃত মালিকের পরিচয় জানা সত্ত্বেও আইনি বাধায় ফেরত দিতে পারেনি পুলিস। খাবার দাবার জোগাড় করে বেশ তোয়াজেই রাখার চেষ্টা করেছিল পুলিস। কিন্তু গোরু তা মানবে কেন! সে মালিকের অনুপস্থিতিতে কিছুই খেতে চায় না। যাকে বলে অনশন আন্দোলন, কার্যত তাই শুরু করেছিল গোরুটি। শেষমেশ আদালত থেকে বিশেষ নির্দেশ নিয়ে সেই গোরু প্রকৃত মালিকের গোয়ালে ফিরিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে গেঁওখালি ফাঁড়ির পুলিস। এই ঘটনা মহিষাদলের নাটশাল মৎস্যচড়া এলাকার।
তবে এই কাহিনির একটি শুরুয়াৎ আছে। কয়েকদিন আগে মৎস্যচড়া এলাকার বাসিন্দা নিয়তিরানি মণ্ডল মহিষাদল থানায় তাঁর তিনটি গোরু চুরির অভিযোগ করেন। তাঁর কালো সাদা ছোপ ছোপ একটি গর্ভবতী গোরু সহ দু’টি বকনা বাছুর গোয়ালঘর থেকে চুরি যায়। তাঁর ছেলে সিন্টু মণ্ডল বলেন, রাতে গোয়ালঘরের তালা ভেঙে তিনটি গোরু চুরি হয়। পরদিন ৮-১০টি গ্রাম ও রূপনারায়ণ নদীর চর এলাকায় খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে গেঁওখালি পুলিস ফাঁড়িতে অভিযোগ করি। একদিন পর পুলিস দু›জনকে গোরু চোর সন্দেহে পাকড়াও করে। জানা যায়, তাদেরই কোনও শাগরেদ গোরু চুরি করেছে। পুলিসের ভয়ে একটি ছোট চারচাকা গাড়িতে করে চোরেরা বাড়ির পাশের রাস্তায় দু’টি গোরু ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু যেহেতু চোরের ছোঁয়া লেগেছে, তাই চুরির মাল হিসেবেই গোরুর নাম উঠেছে পুলিসের সিজার লিস্টে। চোর ছেড়ে দিলেও গোরু পড়েছে আইনি যাঁতাকলে। গোরুর ঠাঁই হয়েছে থানায়। এদিকে গর্ভবতী গোরু নিয়ে চিন্তায় রাতের ঘুম ছুটেছে গৃহস্থের। চুরি যাওয়া গোরুর খোঁজ মিললেও পুলিসের হাত থেকে কীভাবে উদ্ধার হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েন গৃহস্থ। এদিকে গর্ভবতী গোরু ও তার একটি বকনা বাছুরের খাবার জোগাড় করতে পুলিসও হিমশিম। খড় জোগাড় হলেও মালিক ছাড়া গোরু প্রায় অনশন শুরু করেছে। পুলিসের হাতে কোনওমতেই খেতে চায় না গোরুটি। শেষমেশ গৃহস্থের আবেদন মঞ্জুর হয় এবং আদালতের বিশেষ নির্দেশে গোরু ফেরে গৃহস্থের গোয়ালে। তবে একটি গোরু এখনও পাওয়া যায়নি।
এদিকে, মহিষাদলে চোরের উপদ্রবে দু’চোখ এক করার উপায় নেই বাসিন্দাদের। গোরু থেকে দামি মোবাইল, মোটরবাইক কোনও কিছুই বাদ যাচ্ছে না। দিনদুপুরেও চোরের উপদ্রব বেড়েছে বলে অভিযোগ। গৃহস্থের বাড়ি থেকে গোরু, মোবাইলের পাশাপাশি রথের মেলায় মোটরবাইক চুরির ঘটনায় মহিষাদলবাসী আতঙ্কে রয়েছেন। সবাই যদিও থানায় অভিযোগ করছেন না। মহিষাদলের ওসি নাড়ুগোপাল বিশ্বাস অবশ্য চুরি ছিনতাইয়ের অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, এবার চুরি অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক কম। (প্রতীকী চিত্র)