• টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত বর্ধমান, গৃহহীন বহু মানুষ
    এই সময় | ০২ আগস্ট ২০২৪
  • টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন ব্লকের জনজীবন। একাধিক বাড়ির মধ্যে ঢুকেছে জল। বিঘ্নিত যানচলাচল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক না থাকার জন্য এই সমস্যা হয়েছে।শুক্রবার ভাতারের মুরাতিপুরে পথ অবরোধ করেন স্থানীয়রা। বর্ধমান শহরে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাজেপ্রতাপপুর, সুভাষপল্লি, মাঠপাড়া, নীচুপাড়া এলাকায় বৃষ্টি জমার জল প্রবেশ করেছে বাড়ির মধ্যে। ফলে বিপাকে বহু মানুষ। আপাতত অনেককে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রায় ৭০টি পরিবার ঘরছাড়া বলে দাবি স্থানীয়দের। আপাতত ওই পরিবারগুলিকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি স্কুলে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। গত দুই দিন ধরে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ব্যতিক্রমী নয় বর্ধমানও। আর এই বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বহু এলাকা।

    বর্ধমানের বর্তমান চিত্র

    শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাহাচেতন এলাকায় বৃষ্টির জল ঢুকে ডুবেছে বহু বাড়ি। ভাতার ব্লকের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন। এমনকী, রাস্তাঘাট, বাজারগুলিও গিয়েছে জলের তলায়। শুধু তাই নয়, টিউবওয়েলগুলিও রয়েছে জলের তলায়। বর্ধমান কাটোয়া রোডের পাটনার কাছে রাস্তার উপর দিয়ে বইছে জল। মুরাতিপুর,মোহনপুর,বড় বেলুন,বলগোনা,নিত্যানন্দ পুর,ভাতার,মাহাতা এলাকার বেশ কিছু অংশ জলমগ্ন। প্রভাবিত হয়েছে কালনাও।

    প্রবল বৃষ্টির কারণে আউসগ্রামের গুসকরা,ভেদিয়া সহ বিভিন্ন এলাকা বিপর্যস্ত। শহরের ১ এবং ২ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর। বর্ধমান সিউড়ি রোডের জাতীয় সড়কের ভেদিয়া রেলওয়ে আন্ডারপাশ জলমগ্ন হওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত। আউশগ্রামের আনন্দবাজার থেকে তেলতা যাওয়ার রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। নিকাশি ব্যবস্থা থেকে শুরু করে একাধিক দাবিতে শুক্রবার ভাতারের মুরাতিপুরের বাদশাহি রোড অবরোধ করেন স্থানীয়রা।

    কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে?

    এই পরিস্থিতিতে কাউন্সিলরদের তৎপর দেখা গিয়েছে। এলাকায় গিয়ে দুর্গতদের স্থানীয় স্কুল বা অন্য কোনও সুরক্ষিত আশ্রয়ে স্থানান্তরিত করছেন কাউন্সিলররা। তাঁদের খাবার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

    পূর্ব বর্ধমান জেলার বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দপ্তরের আধিকারিক প্রতীক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'গত ২৪ ঘণ্টায় গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০২.৫ মিলিমিটার। এখনও পর্যন্ত কোনও ত্রাণ শিবির বা উদ্ধার টিম তৈরি করতে হয়নি। কয়েকটি জায়গায় কিছু মানুষকে আটকে গিয়েছেন। তাঁদের স্থানীয়ভাবে রাখা হয়েছে। কিন্তু, সেভাবে কাউকে উদ্ধার করার প্রয়োজন পড়েনি।'

    তিনি আরও বলেন, 'জেলাশাসকদের আমরা অনুরোধ করছি যদি কোথাও মনে হয় উদ্ধারের প্রয়োজন রয়েছে তাহলে সেই উদ্যোগ যেন তাঁরা নেন। সিভিল ডিফেন্সের ভলান্টিয়াররাও প্রস্তুত। পুলিশ সুপার মারফত এনডিআরএফ-এর আবেদন জানানো হয়েছে।' কাটোর তিনটি ব্লক, সদর উত্তরে ৪ এবং সদর দক্ষিণে ৩ টি ব্লক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি। গোটা জেলায় ৭২টি বাড়ি পুরো সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ২৬০টি বাড়ি, জেলার বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দপ্তর সূত্রে খবর এমনটাই।

    এই প্রসঙ্গে পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার 'এই সময়'-কে বলেন, 'শুক্রবার গড়ে ১৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ডিভিসিকে বলে জল ছাড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্কুলে কিছু ক্যাম্প করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনও করা হয়নি। পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে প্রশাসন।'
  • Link to this news (এই সময়)