উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও সমতলে চোখরাঙাচ্ছে দুর্যোগ! বাড়ছে ভূমিধস-হড়পা বানের আশঙ্কা
প্রতিদিন | ০৩ আগস্ট ২০২৪
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: উত্তরে ফের দুর্যোগের ভ্রূকুটি! মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হতেই আলিপুরদুয়ারে ফিরে এল ‘লাল’ সতর্কতা। শুক্রবার আবহাওয়া দপ্তরের তরফে এখানে অতিরিক্ত ভারী বর্ষণের ওই সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ওই জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা প্রবল। ঘূর্ণাবর্ত ও নিম্নচাপের জেরে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে ভুটান পাহাড়েও। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
অন্যদিকে, দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলায় অতিভারী বর্ষণের ‘কমলা’ সতর্কতা জারি হয়েছে। এখানে বিক্ষিপ্তভাবে দুশো মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা প্রবল। কালিম্পং ও দার্জিলিং পাহাড়ে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ভারী বর্ষণ চলছে। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত কালিম্পংয়ে ৬২ মিলিমিটার এবং দার্জিলিং পাহাড়ে ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ চলছে সিকিম পাহাড়েও। বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সিকিমের গ্যাংটকে ৪৫ মিলিমিটার, গ্যালসিংয়ে ৪৩ মিলিমিটার, তাদংয়ে ৩৩ মিলিমিটার এবং পকিয়ং ও মঙ্গনে ২৭ মিলিমিটার করে বৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার আবহাওয়া দপ্তরের তরফে গ্যাংটক, গ্যালসিং, মঙ্গন, নামচি, পকিয়ং, সোরেং এলাকায় অতিরিক্ত ভারী বর্ষণের ‘কমলা’ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ৬ আগস্ট পর্যন্ত এখানে অতিভারী থেকে অতিরিক্ত ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের সিকিম কেন্দ্রের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলেন, “প্রতিটি এলাকায় ভূমিধস ও হড়পাবানের সম্ভাবনা থাকায় বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।” আবহাওয়া দপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে একই সতর্কতা জারি করা হয়েছে কালিম্পং ও দার্জিলিংয়ে। পাহাড়ে একটানা বর্ষণের জেরে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে ভূমিধসের বিপর্যয়। একমাস বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার চালু হতে ভূমিধসে ফের বিধ্বস্ত হয়েছে শিলিগুড়ি-সিকিম লাইফ লাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। বিপর্যয় কমবে তেমন সম্ভাবনা আপাতত নেই। কারণ, সিকিমে অতিভারী বর্ষণের সম্ভাবনা প্রবল। স্বভাবতই ফের মারমুখী হতে পারে তিস্তা। বাড়বে ভূমিধসের শঙ্কাও। ওই পরিস্থিতিতে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় বাড়ছে। ইতিমধ্যে ভূমিধসের জেরে ২৯ মাইল এলাকায় রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। লাভা ও পনবু হয়ে ঘুরপথে যান চলাচল করছে।
এদিকে, সিকিমে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের জেরে উত্তরের সমতলে তিস্তার জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে। দোমহানি থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মেখলিগঞ্জ পর্যন্ত তিস্তায় ‘হলুদ’ সঙ্কেত জারি করেছে সেচ দপ্তর। আবহাওয়া দপ্তরের কর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপর যে ঘূর্ণাবর্ত ছিল সেটি শুক্রবার ভোরে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন ঝাড়খণ্ডের উপর নিম্নচাপ এলাকা তৈরি করেছে। এটি পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে মৌসুমী বায়ুর পূর্ব প্রান্ত ফের সক্রিয় হতে উত্তরের পাহাড়-সমতলে তুমুল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এদিকে যেমন তিস্তার জলস্তর বাড়ছে অন্যদিকে ভুটান পাহাড় এবং আলিপুরদুয়ার জেলায় অতিরিক্ত ভারী বর্ষণের জেরে ফুসে উঠতে পারে তোর্সা, কালজানি, রায়ডাক, সংকোশ নদী। ফের বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলায়। একইভাবে শিলিগুড়ির মহানন্দা, বালাসন নদীর জলস্তর বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।