কলকাতা হাইকোর্টে কর্মসংস্কৃতির বেহাল দশা নিয়ে ক্ষুব্ধ বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি সব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। শুক্রবার ইষ্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড (ইসিএল)-এর একটি মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশে সংস্থার সিএমডি সকাল সাড়ে দশটায় ওথ কমিশনারের অফিসে হলফনামা জমা দেওয়ার সময়ে সই করতে গেলেও কোনও অফিসারকে সেখানে পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। যা শুনে বিস্ফোরক বিচারপতি বসাকের প্রশ্ন, কী করে এটা হয়!শুধু কর্মী-অফিসাররা সময়ে উপস্থিত না থাকায় কেন একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক সময় মতো এসেও হাইকোর্টে সই করতে পারবেন না? আদালতের প্রশ্ন, বিচারপতিরা যদি সকাল সাড়ে দশটাতেই এজলাসে বসে যেতে পারেন, তবে অফিসারেরা কেন সময়ে হাজির হবেন না? বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ আদালত রেজিস্ট্রার অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে তলবও করে। পরে আসেন ওথ কমিশনাররাও।
আদালত এর হেস্তনেস্ত করতে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দেয়। শেষ পর্যন্ত সময়ে কাজ শুরু না করা অফিসারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দেন রেজিস্ট্রার অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। আদালতের নির্দেশ, কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা ৬ অগষ্ট পরবর্তী শুনানিতে রিপোর্ট দিয়ে জানাতে হবে।
এ দিন সকাল পৌনে এগারোটা নাগাদ শুনানিতে ইসিএলের সিএমডি-র হলফনামা কেন নথিবদ্ধ করা হয়নি, তা তাঁর আইনজীবী তথা হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শঙ্কর প্রসাদ দলপতিকে প্রশ্ন করা হলেই বিস্ফোরণ ঘটে। শঙ্কর জানান, তাঁর মক্কেল সকাল সাড়ে দশটার আগেই ওথ কমিশনারের ঘরের সামনে হাজির হয়েছিলেন।
কিন্তু তখনও কোনও কমিশনার সেখানে হাজির না হওয়ায় তিনি সই করে হলফনামা জমা দিতে পারেননি। যা শুনে আদালত তলব করে রেজিস্ট্রার অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে। পরে একে একে অন্য আধিকারিকদেরও তলব করা হয়। তাঁরা দাবি করেন, সবাই না এলেও দু’জন কমিশনার হাজির ছিলেন। কিন্তু কোনও ভাবে তাঁদের দেখতে পাননি ওই অফিসার।
বিরক্ত বিচারপতি বসাকের প্রশ্ন, তার কোনও প্রমাণ আছে? সিসিটিভির ফুটেজ দেখান। কিন্তু সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই জানানোর পরে আদালতের স্পষ্ট অবস্থান, একজন চেয়ারম্যান মিথ্যে বলছেন এটা মনে করার কোনও কারণ নেই। ঘটনাচক্রে বারের সম্পাদক-সহ এজলাসে উপস্থিত আইনজীবীরাও বলছেন, কোনওদিনই বেলা এগারোটার আগে ওথ কমিশনাররা কাজ শুরু করেন না।
আদালত এর সবটা মিথ্যে মেনে নিতে পারছে না। বিচারপতি বসাকের আক্ষেপ, প্র্যাকটিস (আইনজীবী হিসেবে) থেকে দেখছি আমাদের মান পড়ে যাচ্ছে। আদালত এ দিন খোঁচা দেয় আইনজীবীদেরও। আদালতের বক্তব্য, কলকাতা হাইকোর্ট মণি-মাণিক্যে ভরা। তার একটি যদি হয় সাড়ে দশটায় কর্মবিরতি করে দেওয়া তবে অন্যটি এখানকার আইনজীবী, বিচারপতি, কোর্ট অফিসারদের সময়ানুবর্তীতার অভাব।
এ প্রসঙ্গে বিচারপতিদের একাংশের সময়মতো এজলাসে হাজির না-হওয়ার কথাও উঠে এসেছে বিচারপতি বসাকের কথায়। আর আইনজীবীদের কাছে তাঁর অনুরোধ, ‘আপনারা শৃঙ্খলা রাখলে, আমরা আপনাদের পথ অনুসরণ করতে বাধ্য হব।’