আলুর ফলনে প্রভাব ফেলা জীবাণুর বাড়বাড়ন্ত কেন! খোঁজ বঙ্গ-গবেষণায়
এই সময় | ০৩ আগস্ট ২০২৪
বাজারে এখন আলুর আগুন দর। এর কারণ হিসেবে ফলন কম কিংবা ফড়েদের ভূমিকা থাকলেও আলু চাষের প্রধান প্রতিবন্ধকতা ধসা রোগ। এই রোগের নেপথ্যে থাকা জীবাণুর প্রভাব ও বাড়বাড়ন্তের কারণ কী? জানা গেল বঙ্গের এক গবেষণায়।আলু চাষের প্রধান অন্তরায় যে ছত্রাক জাতীয় জীবাণু, তার পোশাকি নাম ‘ফাইটোফথোরা ইনফেসটান্স’। এই জীবাণুই আলুর নাবি ধসা রোগের মূলে। প্রতি বছর এই জীবাণু কমপক্ষে ১৫% আলুর ফলন নষ্ট করে। আবহাওয়া খারাপ হলে, কড়া শীতের বদলে বৃষ্টি, কুয়াশা হলে কিংবা গরম পড়লে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে।
২০২৩-২৪ মরশুমে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় দু’বার বৃষ্টি হওয়ায়, প্রায় ৩৫% আলুর ফলন কম হয়েছিল। এর নেপথ্যেও ছিল এই জীবাণু।
নাবি ধসা রোগের জীবাণু কী ভাবে রূপ বদলাচ্ছে, তার প্রভাব কেমন পড়ছে চাষে, তা নিয়ে একটি উল্লেখযোগ্য গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। ভারত সরকারের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের আর্থিক সাহায্যে পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটানি বিভাগের অধ্যাপক সঞ্জয় গুহরায়ের ল্যাবরেটরিতে হয়েছে এই গবেষণা।
গবেষণাপত্রটি ‘মার্কিন সোসাইটি অফ ফাইটোপ্যাথলজি’-র শতাব্দী প্রাচীন জার্নাল ‘ফাইটোপ্যাথলজিতে’ প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের প্রধান আলু উৎপাদনকারী রাজ্য পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অসম ও মেঘালয়ে ধসা রোগ নিয়ে সমীক্ষা হয়। বাংলার আলু উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত- হুগলি, দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারেও সংগ্রহ করা হয়েছে নমুনা।
প্রায় ২০০০ নমুনার জেনেটিক বিশ্লেষণ হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, আলুর নাবি ধসা রোগের জীবাণুর জিন ফি বছর মিউটেট করে আরও শক্তিশালী হচ্ছে। শুধু তাই নয়, তা নতুন নতুন অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গত ১৪ বছর ধরে ভারতে মূলত ইউরোপ থেকে আসা ছত্রাক জাতীয় জীবাণু, ‘ফাইটোফথোরা ইনফেসটান্স’ প্রভাব বিস্তার করেছে। তা জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে অতি আক্রমণাত্মক প্রতিরূপ তৈরি করছে। সেটা সুপ্ত অবস্থায় রয়ে যাচ্ছে বীজের মধ্যে।
এই নতুন প্রতিরূপগুলো উন্নত হওয়ায়, খুব সহজেই আগের প্রতিরূপগুলোকে সরিয়ে আধিপত্য বিস্তার করছে। গবেষণায় দেখানো হয়েছে, কিছু নতুন প্রতিরূপ ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেও রয়েছে। গবেষণাপত্রটির অন্যতম গবেষক তন্ময় দে বলেন, ‘এই জীবাণু বছরভর বেঁচে থাকছে কেমন করে, তার খোঁজ মিলেছে। এদের ছড়িয়ে পড়ার রাস্তাও খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। তা ছাড়া কী ভাবে অনিয়মিত ভাবে ভুল ছত্রাকনাশকের ব্যবহার এদের আরও শক্তিশালী করে তুলছে, তা-ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।’
যাঁর নেতৃত্বে এই গবেষণা, সেই অধ্যাপক সঞ্জয় গুহরায়ের বক্তব্য, ‘আলুর রোগ জীবাণুর গবেষণায় ইন্টারন্যাশানাল পোট্যাটো সেন্টার ও ভারত সরকারের যৌথ উদ্যোগে আগ্রাতে একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় আলু সংক্রান্ত গবেষণায় সাহায্য করবে। পশ্চিমবঙ্গে এই কেন্দ্র তৈরি হলে, রাজ্যের চাষিরা বেশি উপকৃত হতেন।’
তিনি জানান, ভারতে থাকা এই জীবাণুগুলোর ক্রমাগত জেনেটিক বিশ্লেষণ করে সঠিক দমনের উপায় খুঁজে বের না করলে, আলু চাষের ক্ষতি ঠেকানো যাবে না। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আলু বীজ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন সামন্তের কথায়, ‘ধসা রোগ আলু চাষের অন্যতম সমস্যা। এক বিঘা জমিতে চাষ করতে তিন হাজার টাকার কীটনাশক লাগছে। তাতেও অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক মতো ফলন হচ্ছে না।’