আলোচনা ছাড়াই এক লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে কী ভাবে? ডিভিসির দিকে আঙুল তুলল নবান্ন
আনন্দবাজার | ০৩ আগস্ট ২০২৪
ক্রমাগত ভারী বৃষ্টির কারণে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন। জনজীবন বিপর্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে ডিভিসি আরও এক লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হবে, যা রাজ্যবাসীর জন্য বিপজ্জনক বলেই মনে করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। শনিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে এমনটাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এ-ও দাবি করেছেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে এই জল ছাড়ার বিষয়ে কোনও আলোচনা করা হয়নি। আলাপন জানিয়েছেন, বিভিন্ন জেলায় ‘জল-যন্ত্রণা’র দিকে ২৪ ঘণ্টা নজর রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা বলছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যবাসীকে আতঙ্কিত না-হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে নবান্ন। চার জেলাকে সতর্কও করা হয়েছে।
ডিভিসি থেকে জল ছাড়া নিয়ে আগেও ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন মমতা। শনিবার তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ কটাক্ষ করে জানিয়েছেন, ‘মানুষের তৈরি’ বন্যা সৃষ্টির জন্য আবার জল ছেড়েছে ডিভিসি। শনিবার বিকেলে এই নিয়ে ডিভিসির দিকে আবার আঙুল তুলেছে নবান্ন। আলাপন বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে দামোদর ভ্যালি রিভার রেগুলেটেড কমিটি জানিয়েছে, ডিভিসি থেকে ১ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হবে। এই জল ছাড়া হলে তা বাংলার মানুষের জন্য বিপজ্জনক হবে বলে আশঙ্কা রাজ্য সরকারের।’’ আলাপনের আরও দাবি, এই নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি। আলোচনা ছাড়া যাতে ‘একতরফা’ জল ছাড়া না হয়, নবান্নের তরফে সেই অনুরোধও করা হয়েছে। আলাপনের কথায়, ‘‘ডিভিসি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে, এই বিপুল পরিমাণ জল যাতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা না-করে সহসা এবং একতরফা ভাবে ছাড়া না হয়।’’ প্রসঙ্গত, শনিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত মাইথন জলাধার থেকে ১০,০০০ কিউসেক এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে ৭৫,০০০ কিউসেক জল ছেড়েছে ডিভিসি। দুই জলাধার থেকে মোট ৮৫,০০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। রাত ৮টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত মাইথন জলাধার থেকে ১০,০০০ কিউসেক এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে ৮০,০০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। দুই জলাধার থেকে মোট ৯০,০০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়ছে।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যবাসীকে সতর্ক হতে বলেছেন আলাপন। তবে আতঙ্কিত হতে বারণ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সোম এবং মঙ্গলবার রাজ্যবাসীকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। প্রসঙ্গত, সোমবার অমাবস্যার ভরা কটাল রয়েছে। নবান্নের তরফে বলা হয়েছে, প্রশাসন অনুরোধ করলে, তা মেনে নদীর পার থেকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হবে বাসিন্দাদের। আলাপনের কথায়, ‘‘নদীর পার থেকে সরে আসার জন্য প্রশাসন অনুরোধ করলে, তা মানবেন।’’ মুখ্যমন্ত্রী পরিস্থিতির উপর সারা দিন নজর রাখছেন বলেও জানিয়েছেন আলাপন। বিভিন্ন জায়গায় জলস্ফীতি, হড়পা বানের আশঙ্কা রয়েছে। এই নিয়ে মুখ্যসচিব, সেচ দফতর, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলাশাসক এবং এসপিদের পরিস্থিতির উপর মুখ্যমন্ত্রী নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আলাপন।