বেআইনি টাকায় ৬% রেটে ‘ব্যাঙ্কিং পরিষেবা’ বালুর, আদালতে দাবি ইডি-র
এই সময় | ০৪ আগস্ট ২০২৪
একেই বলে মাছের তেলে মাছ ভাজা! রেশন দুর্নীতির টাকা আত্মসাৎ করতে যাঁদের সাহায্য নিতেন, তাঁদেরই আবার সেই টাকা ধার দিয়ে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক মোটা টাকা সুদ আদায় করতেন বলে আদালতকে জানালো ইডি। কয়লা-গোরু থেকে শুরু করে শিক্ষা-পুরসভা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এখনও পর্যন্ত যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন, কেউ এ ভাবে সুদের কারবারে জড়িয়ে পড়েননি বলেও দাবি করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।সে দিক থেকে রেশন দুর্নীতি মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত জ্যোতিপ্রিয় ব্যতিক্রমী চরিত্র বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ব্যাঙ্কের মতো ৬ শতাংশ রেটে এই সুদ সংগ্রহ করা হতো। ইডি সূত্রে খবর, রেশন দুর্নীতি মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাইস মিল মালিক আনিসুর রহমান এবং আলিফ নূর গ্রেপ্তার হয়েছেন।
শুক্রবার আদালতে ইডি দাবি করেছে, অসুস্থ হওয়ার পরে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময়ে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক একটি চিঠি লিখে দিয়েছিলেন মেয়ে প্রিয়দর্শিনীকে। তাতে মুকুলের (আলিফ নূর) নাম লেখা ছিল। ওই চিঠিতে বালু লিখেছিলেন, ‘কাউকে টাকা দেওয়ার প্রয়োজন হলে, অথবা টাকার দরকার পড়লে... মুকুল, শাহজাহান এবং ডাকু সেই টাকা দেবে।
মাসে ১০ লাখ করে সুদের টাকা দেবে মুকুল। মূল টাকা ওর কাছেই আছে। তা নেওয়ার প্রয়োজন নেই।’ পরবর্তী ক্ষেত্রে ওই চিঠির সূত্রেই জানা যায়, রেশন দুর্নীতির ২০ কোটি টাকার ভাগ বালুকে না দিয়ে ব্যবসার প্রয়োজনে আনিসুর রহমান (বিদেশ) এবং আলিফ নূর (মুকুল) নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছিলেন।
মূল টাকা দুই ভাইয়ের কাছে রয়ে গেলেও, সুদ নিতে ছাড়েননি প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী। ৬ শতাংশ সুদে প্রতিমাসে ১০ লক্ষ টাকা নিতেন বালু। ওই লেনদেনের বিষয়টি মেয়েকে চিঠিতে লিখেছিলেন তিনি। শুধু জ্যোতিপ্রিয় নয়, অভিযোগ, ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানের হয়েও ‘মানি পার্কিং’ করতেন বিদেশ-মুকুল। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট শান্তনু ভট্টাচার্যের স্ট্র্যান্ড রোডের একটি অফিসে তল্লাশি চালিয়ে পাঁচটি কাগুজে কোম্পানির হদিশ মিলেছিল।
প্রতিটি কোম্পানির নামের শুরু ‘E এবং H’ দিয়ে। ওই কোম্পানিগুলির সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় এবং তাঁর পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থাকা আরও তিনটি কোম্পানির মধ্যে সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে দাবি ইডি-র। এই কাজ করতে বিদেশ-মুকুলের রাইস মিলগুলি সরকারি তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। ইডি-র দাবি, কর্মীদের ভুয়ো কৃষক দেখিয়ে খাদ্যদপ্তরের অধীনস্থ সংস্থার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়।
এমনকী, একজন কৃষকের কাছ থেকে ৪৫ কুইন্টালের বেশি ধান কেনার অনুমতি না থাকলেও, তার থেকে বেশি ধান কেনা হয়েছে বলে দেখানো হয়েছিল। নিয়ম বহির্ভূত কাজ জানা সত্ত্বেও, টাকাও মঞ্জুর হয়ে যেত সরকারি দপ্তর থেকে। পরে ঘুরপথে তা আবার জ্যোতিপ্রিয়র কাছেই চলে আসত বলে আদালতে দাবি করেছে ইডি।