ছাত্র-যুব আন্দোলন করেই উত্থান হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, অশোক দেব, অরূপ রায়, অরূপ বিশ্বাস-সহ তৃণমূলের অনেক নেতারই হাতেখড়ি হয়েছে ছাত্র রাজনীতিতে। এ বার ছাত্র আন্দোলনের পরিধি থেকেই আগামী প্রজন্মের তুখোড় নেতা-কর্মী তৈরির লক্ষ্যে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) বাছাই করার সদস্যদের বিশেষ ক্লাস নিতে চলেছেন পার্থ ভৌমিক, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, মানস ভুঁইয়া, ব্রাত্য বসু, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়-সহ জোড়াফুল শিবিরের উল্লেখযোগ্য নেতারা।অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ক্লাস নেওয়ার জন্য অনুরোধ করবেন তৃণমূলের ছাত্র নেতৃত্ব। সময় দিতে পারলে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদও এমন ক্লাস নিতে পারেন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কী ভাবে ছাত্র সংগঠনকে সক্রিয় রাখতে হয়, কী ভাবে পড়ুয়াদের সামনে গোছানো ভাষণ দিতে হয়, কী ভাবে ক্যাম্পাসে সদ্য আসা ছাত্রছাত্রীদের টিএমসিপি-র ছাতার তলায় আনতে হবে — এমন বিভিন্ন বিষয়ে এই শিবিরে ক্লাস প্রশিক্ষণ দেবেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
রাজ্যের প্রতিটি জেলার বাছাই করা টিএমসিপি নেতা-কর্মীদের নিয়ে চারটি প্রশিক্ষণ শিবির হচ্ছে। প্রতিটি শিবিরে থাকছেন ৫০০ জন প্রতিনিধি। মালদা, মেদিনীপুর, বর্ধমান ও কলকাতায় হচ্ছে শিবিরগুলি। এর মধ্যে মালদায় দু’দিনের শিবির শুরু হয়েছে শনিবার। তৃণমূলের যে নেতারা ক্লাস নিচ্ছেন, তাঁদের কী বলতে হবে, সে ‘সাবজেক্ট’ আগেই বলে দেওয়া হয়েছে।
আগামী ২৮ অগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। সেই সমাবেশে সাধারণত মমতা, অভিষেকরা ভাষণ দেন। সমাবেশের আগেই দু’টি প্রশিক্ষণ শিবির হয়ে যাচ্ছে। আর তার পর বর্ধমান ও কলকাতায় বাকি দু’টি শিবির হবে বলে জানা গিয়েছে।
রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের কথায়, ‘নতুন ছাত্র-নেতৃত্ব কী ভাবে পড়ুয়াদের সামনে ভাষণ দেবে, তা নিয়ে মেদিনীপুরের শিবিরে আমি বলব। ভাষণে কী কী বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, তা নিয়ে নিজের ভাবনা জানাব। কারণ, উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে সদ্য পা-দেওয়া পড়ুয়াদের সামনে ছাত্র-নেতৃত্বের ভাষণ নবাগতদের ছাত্র সংগঠনে আনতে অনুঘটকের কাজ করে।’
২০১৭-র জানুয়ারি মাসে রাজ্যের সমস্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। নিয়মিত ভোট না-হওয়ায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিএমসিপি-র অনেক নেতা-কর্মীরই ছাত্রভোটের অভিজ্ঞতা নেই। ভোটের জন্য ক্যাম্পাসে যে সংগঠন তৈরি করতে হয়, সেটাও সকলের ঠিক ভাবে জানা নেই।
এই পরিস্থিতিতে মালদার শিবিরে ইতিমধ্যেই ক্লাস নিয়েছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, ‘ছাত্ররা রাজনীতি-বিমুখ হলে আগামী প্রজন্মের পলিটিশিয়ান তৈরি হবে কী ভাবে? তাই ক্যাম্পাসে কী করে সক্রিয় ছাত্র সংগঠন গড়ে তুলতে হয়, তা নিয়ে মালদার শিবিরে বলেছি। কেন ছাত্ররা টিএমসিপি করবে, সেটা ব্যাখ্যা করেছি। দলনেত্রীর আন্দোলনের ইতিহাস থেকে শুরু করে তাঁর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথাও তুলে ধরেছি পড়ুয়াদের কাছে।’
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পরবর্তী ছাত্র সংসদ নির্বাচন কবে হবে, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে শিবিরে ছাত্রভোটের ব্যাপারেও আলোচনা হবে। টিএমসিপি-র সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের কথায়, ‘ছাত্র সংসদের ভোটে কী ভাবে যোগ দিতে হয়, কী ভাবে ছাত্র সংসদ পরিচালনা করতে হয়, সে সব নিয়েও ক্লাস হচ্ছে। আগামী দিনে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্লাস নেওয়ার জন্য অনুরোধ করব আমরা।’