বাঙালির বেড়ানো মানেই তালিকার প্রথমে থাকবে 'দিপুদা'। অর্থাৎ দিঘা-পুরী-দার্জিলিং। বছরে একবার অন্তত দিঘা আর পুরীতে ঢুঁ মারা চাই-ই চাই। অথচ এই দুই সমুদ্র সৈকতের ওঁত পেতে রয়েছে বিপদ!গরমের ছুটিতে বেড়াতে গিয়ে গতবছর দিঘার সি বিচে আপনার ফেলে আসা প্ল্যাস্টিকের প্যাকেটই এখন সবচেয়ে বড় বিপদের কারণ। কেন্দ্রের সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ বোর্ড দিঘা এবং পুরীর সমুদ্র সৈকতে মারাত্মক পরিমাণ মাইক্রোপ্ল্যাস্টিকের অস্তিত্ব টের পেয়েছে। দেশের পূর্ব প্রান্তের অত্যন্ত জনপ্রিয় দুই সমুদ্র সৈকতের এই দশা উদ্বেগ বাড়িয়েছে পরিবেশবিদদের মধ্যে। সামুদ্রিক জীব এবং কোটি কোটি পর্যটকদের ক্ষেত্রে এই মাইক্রোপ্ল্যাস্টিক ভয়ানক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা।
দিঘায় প্রতি লিটার সমুদ্রের জলে ৫.৩ মাইক্রোপ্ল্যাস্টিক পদার্থ পাওয়া যায়। পুরীতে এই পরিসংখ্যান আরও বেশি (৬.৪)। পলি নিয়ে গবেষণা করে আরও ভয়াবহ পরিসংখ্যান মিলেছে। দিঘায় প্রতি কেজি পলিতে পাওয়া গিয়েছে ১৭৩.৪ মাইক্রোপ্ল্যাস্টিক পদার্থ। পুরীতে পাওয়া গিয়েছে ১৯০.৪। এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করছে, দুই সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাতেই প্ল্যাস্টিক দূষণ বড় আকার ধারণ করেছে। এই দুই পর্যটন কেন্দ্রের জন্যই যা ভবিষ্যতে বড় বিপদ বয়ে আনতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাস্ততন্ত্র নিয়ে বরাবরই সরব হতে দেখা যায় লেখক অমিতাভ ঘোষকে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, 'দিঘা এবং পুরীর সমুদ্র সৈকতে এত পরিমাণ মাইক্রোপ্ল্যাস্টিক পদার্থের সন্ধান আমাদের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। স্পর্শকাতর সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্য এটি বিপজ্জনক। পর্যটকদের স্বাস্থ্যজনিত বিপত্তিও লুকিয়ে রয়েছে এতে। ফুড চেনের মধ্যে এই মাইক্রোপ্ল্যাস্টিক পদার্থ ঢুকে পড়লে তার ফল হতে পারে মারাত্মক। অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন।'
মাইক্রোপ্ল্যাস্টিক হল ৫ মিলিমিটার সাইজের প্ল্যাস্টিক পদার্থ। পলিথিন ব্যাগ, প্ল্যাস্টিকের বোতল, সিগারেটের বাট, সিন্থেটিক ফ্রেব্রিক, গাড়ির টায়ার, শিল্প বর্জ্য, মাছ ধরার নেট এবং রঙের নির্যাসই এই মাইক্রোপ্ল্যাস্টিকের উৎস। পরিবেশের মধ্যে থেকে গিয়ে এটি সামুদ্রিক প্রাণের ক্ষতিসাধন করতে পারে।
মাইক্রোপ্ল্যাস্টিককে খাদ্যদ্রব্য ভেবে খেয়ে ফেলে সমুদ্রের প্রাণীরা। সবচেয়ে ক্ষতি হয় মাছ, সমুদ্রের কচ্ছপ এবং সামুদ্রিক পাখিদের। এই মাইক্রোপ্ল্যাস্টিকের মধ্যে ক্ষতিকারক রাসায়নিক থাকে। যা তাদের শরীরে প্রবেশ করে প্রাণহানি ঘটাতে পারে। প্রিয় সিফুড খেতে গিয়ে দিঘা এবং পুরীর সমুদ্রের পাড়ে বহু পর্যটকের শরীরেও প্রবেশ করে এই মাইক্রোপ্ল্যাস্টিক।
দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সভাপতি দেবাশিস শ্যামল বলেন, 'জেলেদের জালে মাছের থেকে বেশি প্ল্যাস্টিক আটকা পড়ে। আবার মরা মাছের পেটের থেকেও প্ল্যাস্টিক পাওয়া যায় অনেক সময়। মাইক্রোপ্ল্যাস্টিকের প্রভাবে মাছেদের প্রজনন ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ধীরে ধীরে মাছের হরেক প্রজাতির সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে। এতে পর্যটন ব্যবসা এবং জেলের রুজিরুটিও বিপদের মুখে। হলদিয়া থেকে শুরু করে পুরী পর্যন্ত শিল্প বর্জ্য সমুদ্রের জলে ফেলার জেরে এই সমস্যা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।'
জামশেদপুর NIT-র অধ্যাপক বলরাম আমবাদে বলেন, 'দিঘা এবং পুরীর মতো জনবহুল এলাকার সমুদ্রের জল এবং পলিতে মাইক্রোপ্ল্যাস্টিকের মারাত্মক পরিমাণ উপস্থিতি আগামীদিনে ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনতে চলেছে।'