শহরের যান শাসনে কি 'উৎসাহ' হারাচ্ছেন ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের একাংশ? তাঁদের কি 'মন' ভালো নেই! কারণ, অনেকেই কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগ থেকে বাহিনীর অন্য বিভাগে বদলি হতে দরবার করছেন লালবাজারে। সেই আবেদন যাতে সহজে খারিজ না হয়ে যায়, তার জন্য মেডিক্যাল রিপোর্ট-সহ তাঁরা চিঠি-ও জমা দিচ্ছেন বলে সূত্রের খবর।কেন উৎসাহ হারাচ্ছেন নিচুতলার পুলিশকর্মীরা? 'বিষয়টি বিভাগীয়' বলে পুলিশ কর্তারা এড়িয়ে গেলেও, নিচুতলার কেউ কেউ মুখ খুলতে শুরু করেছেন। দক্ষিণ কলকাতার ট্র্যাফিক গার্ডের এক সার্জেন্ট অনুযোগের সুরে জানালেন, 'ট্র্যাফিকের ডিউটিতে একটু বাড়তি চাপ নিতেই হয়। তাতে সার্জেন্ট এবং পুলিশকর্মীরা অভ্যস্ত। কিন্তু, সেই চাপ দিন দিন আরও বাড়ছে। বিশেষ করে পর পর দু'দিন ট্র্যাফিকের নাইট ডিউটি এখন যন্ত্রণার বিষয় হয়ে উঠেছে। পর্যাপ্ত কর্মীর অভাবেই এমনটা পরিস্থিতি।'
পুলিশ সূত্রে খবর, আগে রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত নাইট ডিউটি হতো। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ট্র্যাফিক গার্ডে সেই নিয়ম উঠে গিয়েছে। সার্জেন্টদের একাংশের বক্তব্য, 'এখন সন্ধ্যা ৮টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত নাইট ডিউটি চালু হয়েছে। তা-ও একদিন নয়, পর পর দু'দিন। তার পর 'অফ ডে' পাওয়া যাচ্ছে।'
পুলিশকর্মীদের যুক্তি, রাত ৮টা এবং সকাল ৯টায় ট্র্যাফিকের ভালো চাপ থেকে। দু'দিন এ ভাবে নাইট করার পরে, যখন পরের দিন ডিউটি রিলিজ় হয়, 'অফ ডে'-তে পরিবারকে সময় দেওয়া যায় না। ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিতে হয়।
তা ছাড়া নয়া নিয়মে জরিমানা করতে গিয়েও গাড়ি চালকদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে তাঁদের অভিযোগ। প্রতিটি ট্র্যাফিক গার্ডে লোকবলের অভাব থাকায় সঙ্গে ফোর্স থাকছে না। সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে কাজ সামলাতে হচ্ছে। থানার সাহায্যও সব সময় মিলছে না। কোর্টে মামলা উঠলে, নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে ট্র্যাফিক পুলিশকেই।
উত্তর কলকাতার ট্র্যাফিক গার্ডের এক সার্জেন্টের কথায়, 'সরকারি চাকরি করে কেন প্রতিদিন এত মানসিক যন্ত্রণা নিতে যাব? কারও কারও সুগার-প্রেসার দেখা দিচ্ছে।' অভিযোগ উঠছে, পুলিশের ব্যারাক বা থাকার জায়গা নিয়েও। অনেকে বিভিন্ন জেলা থেকে এসে কলকাতা পুলিশে চাকরি করছেন। তাঁদের অনেকেই ব্যারাকে থাকেন। অভিযোগ, সেখানে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নেই। এ ভাবেই দিনের পর দিন চলছে।
কলকাতা পুলিশের ডিসি ট্র্যাফিক শ্রীকান্ত জগন্নাথরাও বলেন, 'কোনও সমস্যা হলে গুরুত্ব সহকারে দেখি। তার জন্য পুলিশ ওয়েল ফেয়ার বোর্ডও রয়েছে। ট্র্যাফিক বিভাগ থেকে বদলি চেয়ে কতজন চিঠি পাঠিয়েছেন আমার জানা নেই।'
পুলিশ বাহিনীতে যে লোকবল কম, তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের 'ব্যুরো অফ পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট' (বিপিআরডি)-এর রিপোর্টেও উঠে এসেছে। দেশের মধ্যে ট্র্যাফিক পুলিশের শূন্য পদের নিরিখে প্রথম দিকেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। কলকাতা পুলিশে ২৬টি ট্র্যাফিক গার্ডে ইনস্পেক্টর, সার্জেন্ট, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার-সহ সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচশো কর্মী রয়েছেন।
এরই মধ্যে ভাঙড় ডিভিশন তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় নিয়োগ নেই। নিয়োগ না-হলে সমস্যা উত্তরোত্তর বাড়বে বলেই দাবি পুলিশকর্মীদের।