অজান্তেই বাড়িতে মশার চাষ! পুর-কোষাগারে জমা ২১ লক্ষ
এই সময় | ০৫ আগস্ট ২০২৪
গাফিলতির জেরে অজান্তেই মশার লার্ভার চাষ হচ্ছে, এমন বাড়িতে অভিযান চালিয়ে জরিমানা বাবদ গত এক বছরে ২১ লক্ষ টাকা ঘরে তুলেছে কলকাতা পুরসভা। নেপথ্যে রয়েছে জরিমানার অঙ্ক বাড়িয়ে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করা। কিন্তু তাতেও নাগরিকদের একাংশের হুঁশ ফিরছে না বলে অভিযোগ। দিব্যি বাড়িতে জল জমিয়ে মশার লার্ভার আঁতুড়ঘর তৈরি করা হচ্ছে শহরের নানা প্রান্তে।অথচ আগে পুর-আইন ৪৯৬ (বাড়িকে লার্ভা জন্মানোর উপযুক্ত স্থান তৈরি) অনুযায়ী সর্বোচ্চ হাজার টাকা জরিমানা চালু ছিল। জরিমানা খুব বেশি না-হওয়ায় টাকা মিটিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছিলেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে রুল সংশোধন করা হয়। বছর কয়েক আগে বিধানসভায় আগের পুর-আইন সংশোধন করে ‘৪৯৬ এ’ নামে একটি ধারা আনা হয়েছে।
যার ফলে এখন একই অপরাধে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যায়। দু’বার নোটিস পাঠিয়ে সতর্ক করার পরেও যাঁরা ভুল না শুধরে বাড়িতে মশার লার্ভা জন্মানোর আদর্শ স্থান তৈরি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে পুর-আদালতে। সেই মামলার ভিত্তিতে জরিমানা নির্দিষ্ট করছে কোর্ট। তাতেই পুর-কোষাগারে ২১ লক্ষ টাকা এসেছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই।
নাগরিকদের সচেতনতা বাড়ছে না বলে পুরসভার দাবি। যেমন, দিন সাতেক আগে যাদবপুরের বাসিন্দা বিপ্লব চক্রবর্তীর বাড়িতে অভিযান চালাতে যান পুরকর্মীরা। দেখেন, ফ্রিজের ট্রে থেকে শুরু করে ছাদে রাখা বালতি — সবেতেই দীর্ঘদিনের জমা জল। আর তাতে কিলবিল করছে মশার লার্ভা। সে দিকে নজরই দেননি বাড়ির কেউ।
আবার, কাঁকুরগাছিতে মালতী দত্ত নামে এক বাসিন্দার বাড়িতে দিন কয়েক আগে অভিযানে যান পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা। মালিক প্রথমে ঢুকতেই বাধা দেন। পরে স্থানীয় কাউন্সিলারের হস্তক্ষেপে ভিতরে ঢুকে কার্যত চক্ষু চড়কগাছ পুরকর্মীদের। ছাদে থাকা পরিত্যক্ত টব, বালতিতে থিকথিক করছে মশার লার্ভা। নাগরিকদের অনেকেরই অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, জল জমার সমস্যা মেটাতে পুরসভাই ব্যর্থ। তার দায় চাপানো হচ্ছে তাঁদের ঘাড়ে। তা ছাড়া, জরিমানা নিয়ে তেমন প্রচারও চোখে পড়ে না।
নাগরিক বনাম প্রশাসনের এই তরজার মধ্যেই বাড়ছে ডেঙ্গি। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, গত ২৪ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে ২,১০০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গত এক মাসে প্রায় ৯০০ জনের রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। এই পরিস্থিতিতে রোগে লাগাম পরাতে চাইছে রাজ্য। সমস্ত পুরসভাকে নিয়ে চলতি সপ্তাহে বৈঠকে বসবে পুর দপ্তর। বৈঠকে ডেঙ্গি-মোকাবিলায় পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে।