• আওয়ামি লিগের কার্যালয় ভাঙচুর বেনাপোলে, পুড়ল বঙ্গবন্ধুর পোস্টার
    বর্তমান | ০৬ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা, বনগাঁ, বসিরহাট: সকাল থেকেই বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্তে জড়ো হচ্ছিলেন বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে সরব হচ্ছিলেন তাঁরা। পরে পদত্যাগের খবর আসতেই শুরু হয় উচ্ছ্বাস। তারপরই আওয়ামি লিগের একাধিক দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান আন্দোলনকারীরা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় সমস্ত কাগজপত্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পোস্টার ছিঁড়ে তাতেও আগুন লাগিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। ফাটানো হয় বাজিও। সোমবার সকালে বাংলাদেশের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির আঁচ এসে পড়েছিল এপারের পেট্রাপোলেও। এই পরিস্থিতির জেরে রাজ্যের পাঁচটি আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশে বন্ধ থাকল আমদানি-রপ্তানি। পেট্রাপোল ও ঘোজাডাঙায় বাণিজ্য চললেও দুপুর গড়াতেই তা বন্ধ হয়ে যায়।

    এদিন বেনাপোলের বাসিন্দা সাহিন আজাদ ফোনে জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর আসতেই বাজি ফাটানো শুরু হয় এলাকাজুড়ে।’ তবে, এপারে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সীমান্তে বাড়ানো হয়েছে বিএসএফের নজরদারি। ভারতের পক্ষে সেনাকে তৈরি রাখা হয়েছিল। বনগাঁ শহরে জাতীয় সড়কের পাশে সেনাদের জড়ো হয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। এদিন যাত্রী চলাচল অন্যান্য দিনের তুলনায় কম ছিল। দুপুরের পর তা কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। পরে যাত্রী চলাচল শুরু হয়। চিকিৎসার জন্য এদেশে এসেছিলেন প্রিয়াঙ্কারানি সাগর। তিনি বলেন, ‘শয়ে শয়ে মানুষ মুজিবুর রহমানের ছবি ছিঁড়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিল। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিল তারা।’ ঢাকায় আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য রবিবার বাংলাদেশে যান বারাসতের বাসিন্দা মোমিন আলি মণ্ডল। যশোর থেকে ফিরে আসেন তিনি। মোমিন আলি বলেন, ‘একাধিকবার রাস্তা আটকে দিয়েছিল। ঘুরে পথে বেনাপোল এসেছি।’

    বাংলাদেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সোমবার পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তে বাণিজ্য ব্যাহত হয়। সকালের দিকে ধীরগতিতে বাণিজ্য চললেও দুপুরের পর তা বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিদিন পেট্রাপোল দিয়ে প্রায় ৪০০ পণ্যবাহী লরি বেনাপোলে যায়। এদিন মাত্র ১৫৬টি গিয়েছে। পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা চাই দ্রুত দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। বাংলাদেশে আটকে থাকা অনেক লরি চালককে দেশে ফেরানো হয়েছে। বাকিদেরও ফেরানোর চেষ্টা চলছে।’

    এদিন বসিরহাটের ঘোজাডাঙা সীমান্তেও বাণিজ্য ব্যাহত হয়। সকালের দিকে কিছু পণ্যবাহী লরি বাংলাদেশে গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। প্রভাব পড়ে যাত্রী চলাচলেও। বসিরহাট, হাসনাবাদ, সামশেরনগর সহ সব জায়গায় বাড়তি সতর্কতা জারি হয়েছে। চলছে বিএসএফের পেট্রলিং।

    দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গ মিলিয়ে একসঙ্গে পাঁচটি আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার জেরে বন্দর চত্বরে লম্বা লাইন পড়েছে পণ্য বোঝাই ট্রাকের। তাতে পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা, ফল, পাথর, ফ্লাইঅ্যাশ, কাপড় প্রভৃতি সামগ্রী রয়েছে। এনিয়ে রপ্তানিকারকরা রীতিমতো উদ্বিগ্ন। পশ্চিমবঙ্গ এক্সপোর্টার কো-অর্ডিনেশন কমিটির রাজ্য সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, তিনদিনের জন্য রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ করেছে বাংলাদেশ সরকার। এজন্য চ্যাংড়াবান্ধা, ফুলবাড়ি, হিলি, মহদিপুর, পেট্রাপোল স্থলবন্দর বন্ধ রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পাঁচটি বন্দরে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় ২৫০০টি পণ্যবোঝাই ট্রাক। তাতে কয়েকশো কোটি টাকার পণ্য রয়েছে। শুধুমাত্র বসিরহাটের ঘোজাডাঙা বন্দর দিয়ে পচনশীল পণ্য এদিন রপ্তানি করা হয়। প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেও বেশ কিছুদিন বাণিজ্য বন্দরগুলি বন্ধ ছিল।
  • Link to this news (বর্তমান)