• ‘সীমান্ত খোলা? দ্যাশে ফিরতে পারুম!’ কলকাতায় চিকিৎসা করাতে এসে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশিরা
    বর্তমান | ০৬ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ছেলের হাত ধরে মার্কুইস স্ট্রিটের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে এক মহিলা। সাংবাদিক শুনে সটান প্রশ্ন, ‘সীমান্ত খোলা আসে? দ্যাশে ফিরতে পারুম? আপনাদের কাছে কোনও খবর আসে?’ তাঁর স্বামী এসে উপস্থিত হলেন। তিনি বেশিক্ষণ দাঁড়াতে চাইলেন না। ‘যা হবে দেখা যাবে,’ বলে ছেলের-স্ত্রীর হাত ধরে নিয়ে এগলেন। শেখ হাসিনা ঢাকা ছেড়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এই খবর ততক্ষণে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে কলকাতায়। তারপর উদ্বিগ্ন মুখের সারি শহরজুড়ে চোখে পড়েছে। 

    বাংলাদেশ থেকে এঁদের কেউ এসেছেন চিকিত্সার জন্য। কেউ স্রেফ কলকাতা ঘুরতে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতেও এসেছেন অনেকে। মূলত নিউ মার্কেট সংলগ্ন মার্কুইস স্ট্রিটের হোটেলগুলিতে থাকছেন তাঁরা। বিকেলে ব্যাগপত্তর গুছিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন মিঠুন মোদক। চিকিত্সার জন্য ঢাকা থেকে এসেছিলেন এ শহরে। বললেন, ‘আপাতত সীমান্তের কাছাকাছি চলে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। তারপর দেখা যাক কীভাবে দেশে ফিরব।’ কারও বাসের টিকিট বাতিল হয়ে গিয়েছে। কেউ দেশে থাকা পরিবারের জন্য ভয়ানক উদ্বিগ্ন। তবে কলকাতায় আসা বাংলাদেশের নাগরিকরা এই মুহূর্তে যেভাবে হোক দেশে ফিরতে চাইছেন। চট্টগ্রামের বাসিন্দা মুন্নি বললেন, ‘ইচ্ছে করছে আজই দেশে ফিরে যেতে। দেখা যাক কী হয়।’ উদ্বেগে রাস্তায় ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিদের পুলিস হোটেলে ফিরে যেতে বারবার অনুরোধ জানিয়ে গিয়েছে। রাস্তায় জমায়েত করতে নিষেধ করেছে। 

    অন্যদিকে পার্ক সার্কাসে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের অফিসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করেছে লালবাজার। কলকাতা পুলিসের যুগ্ম কমিশনার (সদর) মিরাজ খালিদ বলেছেন, ‘পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের সার্বিক পরিস্থিতি বিচার করে আগেই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছিল। সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভবন ছাড়তেই পুলিস কমিশনারের নির্দেশে শহরের উপ দূতাবাসে ২০ বাড়তি ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।’ অন্যদিকে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি জ্যোৎস্না চট্টোপাধ্যায়, সাধারণ সম্পাদক কঙ্কনা মিত্ররা জানিয়েছেন, এখানে যে কোনও সমস্যায় তাঁরা পাশে আছেন। জানা গিয়েছে, কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী দেশে গিয়ে আটকে পড়েছেন। কেউ ফিরতে পেরেছেন। কেউ পারেননি। ফাইন আর্টস বিভাগের এমএ দ্বিতীয় সেমেস্টারের ছাত্রী মনীষা রায় বাংলাদেশে আটকে পড়ে সোমবারের পরীক্ষা দিতে পারেননি। তাঁকে পরে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে। অনেকে আন্দোলনের সময় দেশে গিয়ে আটকে পড়েছিলেন। তবে সীমান্ত খোলার পর কেউ কেউ আসতে পেরেছেন। তাঁদের বিশেষ সুযোগ দিয়ে ফর্ম পূরণ এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত অন্যান্য অফিসিয়াল কাজের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)