• ‘কোনও দোকানে মাথা বিক্রি হয় দেখেছেন!’ মন্তব্য সার্জেন্টের 
    বর্তমান | ০৬ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: লক্ষাধিক টাকার বাইক। চালক ও আরোহী কেতাদুরস্ত। চালকের মাথায় হেলমেট আছে। কিন্তু পিছনে বসে থাকা সওয়ারির মাথা ফাঁকা। হাওয়ায় ফুরফুর করে উড়ছে চুল। বাইকটি দাঁড় করালেন কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট। হেলমেট না থাকা নিয়ে প্রশ্ন করলেন। সওয়ারি কিন্তু কিন্তু করে বললেন, ‘স্যার বাড়িতে চারটে হেলমেট আছে। আসলে চুলটা একটু স্পাইক করেছি। তাই আজ আর হেলমেট পরিনি।’ আজব যুক্তি শুনে চোখ কুঁচকে তাকালেন খোদ সার্জেন্ট। তারপর মুচকি হেসে প্রায় রঞ্জিত মল্লিক স্টাইলে বললেন, ‘পাগল, চুল গেলে চুল পাওয়া যায়। মাথা গেলে কোথায় পাবে?’ তারপর আর একটু কাছে এসে বলেন, ‘কোনও দোকান বা ইন্টারনেটে মাথা বিক্রির কোনও খোঁজ আছে?’ রবি ও সোমবার দুপুর থেকে সিঁথির মোড়ে হেলমেটবিহীন বাইক চালক ও আরোহীদের সঙ্গে পুলিসের এমন মজার রসিকতা প্রত্যক্ষ করল সবাই। আর মজার বাইরে দেখা গিয়েছে, হাজার অনুনয়, কান ধরে ক্ষমা ভিক্ষা সত্ত্বেও সার্জেন্টদের মন গলাতে ব্যর্থ আইনভঙ্গকারীরা।

    কলকাতা পুলিস এবং বারাকপুর কমিশনারেটের সীমানা এলাকা হল সিঁথির মোড়। ওখানে চোর-পুলিস খেলা খেলতে খেলতে হেলমেট ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে দিব্যি যাতায়াত করেন বহু চালক। সিঁথির মোড়ে বিটি রোডে এসে মেশে কালীচরণ ঘোষ রোড ও কাশীনাথ দত্ত রোড। এই দু’দিক দুই পুলিসের নিয়ন্ত্রণে। পুলিসি কড়াকড়ি হলেই টুক করে গাড়ি ঘুরিয়ে গলি পরিবর্তন করে আইনের ফাঁক গলাটাই রীতি। রবিবার তাই এই দুই রাস্তা ও বিটি রোডে পুলিস হেলমেটবিহীন চালক ও সওয়ারিদের উপর বিশেষ নজরদারি শুরু করেছে। পুলিসের জালে ধরা পড়া বাইক আরোহীদের অজুহাত শুনে কখনও হেসে ফেলছেন কড়া মেজাজের সার্জেন্টরা। কখনও রেগে যাচ্ছেন। কোনও চালকের সাফাই, ‘এইমাত্র হেলমেট চুরি হয়েছে।’ কারও বক্তব্য, ‘ভাই হেলমেট নিয়ে গিয়েছে।’ কেউ বলেন, ‘বড় রাস্তায় তো উঠিনি।’ একজন বললেন, ‘লাইসেন্স বাড়িতে। একটু সময়ের জন্য ছাড়ুন। এনে দিচ্ছি।’

    এর পাশাপাশি জরিমানা ঠেকাতে ম্যানেজ করারও হাজার ফন্দিফিকির বাইকারদের মুখে শোনা গিয়েছে। কিন্তু সবকিছুতেই নাছোড়বান্দা পুলিস। সোমবার দুপুর ১২টা নাগাদ হেলমটবিহীন তিন সওয়ারিকে আটকান কর্তব্যরত পুলিস কর্মীরা। বাইক সওয়ারিদের হাতে ছিল কলসি ও প্রসাদ। বাইক থামানোর পর তপ্ত পিচের রাস্তায় খালি পা ফেলেই তাঁরা লাফিয়ে ওঠেন। পুলিসের প্রশ্ন করার আগেই কান ধরে ফেলেন এক যুবক। বলেন, ‘স্যার তারকেশ্বরে বাবার মাথায় জল ঢেলে ফিরছি। হেলমেট ওখানে চুরি গিয়েছে। পা জ্বলে যাচ্ছে। দাঁড়াতে পারছি না। মাফ করে দিন। এবারই প্রথম হেলমেট ছাড়া বের হয়েছি।’ এক যুবক পুলিসকে প্রসাদ দিতেও উদ্যোগী হলেন। সব শোনার পর মুচকি হেসে সার্জেন্ট বলেন, ‘বাবা তো তোমায় হেলমেট পরতে বারণ করে চিঠি লেখেননি। বা ফোনও করেননি। থাকলে দেখাও লাইসেন্স।’ খানিক পরে হাফ প্যান্ট, গেঞ্জি ও হাওয়াই চটি পরে বের হওয়া স্থানীয় এক যুবক পুলিসের ফাঁদে আটকে পড়ে বলেন, ‘স্যার, মানে একটু চা খেতে এসেছিলাম। এই সামনেই বাড়ি। ফিরে যাচ্ছি।’ বলে বাইক ঘোরানোর তোড়জোড় করছিলেন। রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে এক কনস্টেবল বললেন, ‘আরে আগে এদিকে তো আসুন।’ উত্তর এল, ‘না না, বি টি রোডে উঠব না। হেলমেট নেই তো।’ একমুখ হাসি নিয়ে কনস্টেবল বললেন, ‘তাহলে ফাইন দিন। তারপর চা খাওয়াব আপনাকে।’ যুবকের মুখ শুকিয়ে গেল লহমায়। এভাবে লাগাতার চলল অভিযান। ‘এরপর যদি কিছুটা হুঁশ ফেরে, তাহলে বর্তে যাই,’ কপালের ঘাম মুছে বললেন এক সার্জেন্ট।
  • Link to this news (বর্তমান)