• চন্দ্রবোড়ার কামড়ের পর ৩ ঘণ্টা গৃহবধূর গলা-পা বেঁধে ওঝা.... পরিণতি মর্মান্তিক!
    ২৪ ঘন্টা | ০৬ আগস্ট ২০২৪
  • প্রসেনজিত্‍ সর্দার: চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ের পর এক গৃহবধূর গলা-পা বেঁধে ৩ ঘণ্টা ওঝার দাপট। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা ওই গৃহবধুকে মৃত বলে ঘোষণা করে। অভিযুক্ত ওঝার খোঁজে পুলিস। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে সোনারপুরে। মৃতার নাম রীনা পুরকাইত (৫৬)। মৃতার বাড়ি সোনারপুর থানার অন্তর্গত আড়াপাঁচ এলাকায়।

    জানা গিয়েছে, সকালে ওই গৃহবধূ কাঠ বের করছিলেন রান্না করার জন্য। সেইসময় একটি চন্দ্রবোড়া সাপ তাঁর ডান পায়ে কামড় দেয়। তিনি পরিবারের লোকজনদেরকে ঘটনার কথা জানান। পরিবারের লোকজন বধূকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার বদলে প্রথমে সাপটির খোঁজ শুরু করে। তারপর রান্নাঘর থেকেই সাপটিকে ধরে মেরেও ফেলে। এরপর ওই বধূকে নিয়ে স্থানীয় এক ওঝার দ্বারস্থ হন পরিবারের সদস্যরা। সেখানে প্রায় ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ঝাড়ফুঁক চলে। এমন কি সাপের বিষ যাতে ওই বধূর কিছু না করতে পারে তার জন্য ওই গৃহবধূর গলায় ও পায়ে ওষুধও বেঁধে দেয় ওঝা। পাশাপাশি জলপোড়া, তেলপোড়া করা হয় বলেও অভিযোগ।

    এদিকে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ায় সাপের বিষে ওই গৃহবধূ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শেষপর্যন্ত বেগতিক বুঝে ওই বধূর পরিবারের লোকজন ওঝার হাত থেকে বধূকে উদ্ধার করে। চিকিৎসার জন্য তড়িঘড়ি ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় পুরকাইত পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। ক্যানিং থানার পুলিস মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। হাসপাতালের সর্প বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ সমরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘সাপের কামড়ের পর ওঝা-গুণিন করায়, তারপর মৃত্যু! এমনটা খুবই দুঃখজনক। বর্ষায় প্রতিদিনই চন্দ্রবোড়া, কেউটে কালাচ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। সঠিক সময়ে হাসপাতালে আসলে আমরা চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে সুস্থ করে বাড়িতে পাঠাচ্ছি।'

    তিনি আরও বলেন, 'কিন্তু বর্তমানে এতে সচেতনতার পরেও বেশকিছু মানুষ বিশ্বাস করে ওঝার দ্বারস্থ হয়ে নিজের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছেন। আবার ওঝারাও সুযোগ পেলে কেরামতি দেখাতে ব্যস্ত। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ ওঝা গুণিনদের বিরুদ্ধে যদি কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, তবেই সাপে কামড়ানো মৃত্যুর সংখ্যা কমতে পারে।' অভিযোগের ভিত্তিতে ওঝার খোঁজে পুলিস। উল্লেখ্য গত বৃহস্পতিবার কুলতলি থানার অন্তর্গত মেরীগঞ্জের বাসিন্দা বধূ সাইদা শেখকে কেউটে সাপের কামড়ের পরেও ওঝা গুণিনের দ্বারস্থ হয়েছিল পরিবার। সেখানেও তাঁর বেশ কিছুটা সময় নষ্ট হয়। এরপর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে জানায় চিকিৎসকরা। ওঝার দাপটে ঠিক একই ঘটনাও আবারও দেখা গেল সোনারপুর থানা এলাকায়।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)