• সিপিএম ৩৪ বছরের ভুল স্বীকার করুক, চায় এসইউসি
    প্রতিদিন | ০৭ আগস্ট ২০২৪
  • ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ভোটে সিপিএম ফের শূন‌্য। যা নিয়ে তীব্র শ্লেষে সিপিএমকে বিঁধল এসইউসি। সোমবার রানি রাসমণি রোডে তাদের জনসমাবেশ থেকে সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ বলেন, ৩৪ বছরের অপশাসনের ভুল থেকে তাদের এই ফল হয়েছে। নতুন করে জনমত নিয়ে আর কী হবে? তারা তাদের ভুল স্বীকার করুক। পাশাপাশি বাংলাদেশের পরিস্থিতির জন‌্য ‘বুর্জোয়া পলিটিক্সের’ ক্লেদাক্ত চেহারাকে দায়ী করে সরব হয়েছেন। দেশের রাজনীতিকেও এই ক্লেদাক্ত চেহারার জন‌্য বিজেপিকে নিশানা করেছেন তিনি।

    সোমবার ৫ আগস্ট তাদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক শিবদাস ঘোষের ৪৮ তম প্রয়াণদিবসে রানি রাসমণি রোডে জনসমাবেশ ছিল এসইউসির। সেই সমাবেশ থেকেই প্রভাসবাবু কখনও সরব হয়েছেন বিজেপির বিরুদ্ধে, কখনও সিপিএমের বিরুদ্ধে। তাঁর কথায়, “সিপিএম এখন জনমত সংগ্রহ করছে কেন তাদের ভোট কমল। এর জন্য জনমতের কী দরকার। তারা কি জানে না ৩৪ বছর কী অপশাসন তারা করেছে?” এর সঙ্গেই বলেন, “বামপন্থাকে আত্মসাৎ করে প্রথমে সিপিআই, তার পর সিপিএম রাজত্ব চালিয়েছে। প্রমোটাররাজ, সিন্ডিকেটরাজ, তোলাবাজির রাজত্ব চলেছে। আগে তো কে চাকরি করবে, কে কাজ পাবে, কার সঙ্গে কার বিয়ে হবে এসবও সিপিএম ঠিক করত। সিপিএম কি ৩৪ বছরে কী ভুল করেছে সেটা স্বীকার করেছে?” এরই প্রেক্ষিতে শিবদাস ঘোষের উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন, “শিবদাস ঘোষ বলতেন, যাঁরা প্রকৃত বামপন্থী নিজের ভুল স্বীকার করে। এরা তা স্বীকার করেনি। তার জন্যই এই পরিণতি। আজ তাদের সংসদে দুটো আসনের জন্য লড়তে হচ্ছে।” তবে তিনি বা তাঁর দল কখনওই সিপিএম-বিরোধী অবস্থান নিয়ে চলেন না বলে সাফ বলে দেন। তাঁর কথায়, “আমরা সিপিএম বিরোধী কোনও বিদ্বেষ নিয়ে চলি না। আমরা চাই সিপিএম তাদের ভুল স্বীকার করুক। বলুক তারা ভুল করেছে। এই নন্দীগ্রামে সিপিএম ক্যাডার দিয়ে গণধর্ষণ পর্যন্ত করেছে। এ মানুষ মেনে নিতে পারে না।”

    এর পরই বিজেপি-সহ আন্তর্জাতিক রাজনীতি বুর্জোয়াদের হাতে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বলে সরব হন। তাঁর অভিযোগ, বিজেপির বুর্জোয়া রাজনীতি নিয়ে। লোকসভা ভোটের ফলকে সামনে রেখে শিবদাস ঘোষের উদ্ধৃতি উল্লেখ করে বলেন, “তিনি যা বলেছিলেন এই নির্বাচনে তাই হয়েছে। বুর্জোয়া পলিটিক্স কতটা অধঃপাতিত সেটা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে, কদর্যতা প্রদর্শন চলছে। বুর্জোয়া সংসদীয় রাজনীতি ক্লেদাক্ত চেহারা নিয়েছে।” কংগ্রেস নেতৃত্বের পাশাপাশি তৃণমূলকেও একহাত নেন। এর সঙ্গেই বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “একই চেহারা প্রতিবেশী বাংলাদেশে। সেখানে ছাত্র সমাজ এক ঐতিহাসিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েকশো প্রাণ শহিদ। সেখানকার সরকারের পতনের দাবিতে লড়াই করেছে তারা। আর এই লড়াইয়ে জামাত বিএনপি আছে বলে প্রচার চালানো হচ্ছিল। সেটা একেবারে ঠিক নয়।” তাঁর কথায়, “লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর কন্ঠে রবীন্দ্র-নজরুল সঙ্গীত। এই গান ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লববাদকে সঞ্চারিত করেছিল সেই গান গেয়েই তাঁরা শহিদের মৃত্যুবরণ করেছেন।” এ প্রসঙ্গে তাঁর যুক্তি, “দেশের রাজনীতি বুর্জোয়া শিল্পপতিরা নিয়ন্ত্রণ করছে। তারাই বাংলাদেশ লুঠ করছে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি চীনের সঙ্গে পাল্লা দিতে চাইছে তারা।”

    ছাত্র আন্দোলনে বারবার জোর দিয়ে প্রভাসবাবু স্পষ্ট জানিয়ে দেন, পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সংগ্রাম চাই। তাঁর কথায়, “বাংলাদেশের ধাঁচে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাদের মতো করে শক্তি সঞ্চয় করে লড়াই করতে হবে ছাত্রছাত্রীদের। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের দাবিতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। সেনা ক্ষমতা নিতে চেয়েছিল। মানুষ বলেছে অন্তর্বর্তী সরকার চাই। আলোচনা চলছে।” এর সঙ্গেই প্রত্যেককে বলেছেন, শিবদাস ঘোষের পথেই চলতে হবে। সেই সঙ্গে রাজনীতির তুলনামূলক আলোচনার জন‌্য পাড়ায় পাড়ায় মহল‌্যায় মহল‌্যায় ‘পাবলিক কমিটি’ গড়ে তুলতে হবে। তাঁর কথায়, “পাড়ায় মহল্লায় রাজনীতির চর্চা করুন। পাবলিক কমিটি গড়ে তুলুন। কোন দল ঠিক কোন দল বেঠিক আলোচনা করে ঠিক করুন। তবেই জনমত গড়ে উঠবে। কোন পথ ঠিক বুঝতে পারবেন।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)