• রানাঘাটে তৈরি নিকাশি জলের পরিশোধন কেন্দ্র
    বর্তমান | ০৭ আগস্ট ২০২৪
  • দীপন ঘোষাল, রানাঘাট: গোটা শহরের জল নিকাশি নালার মাধ্যমে গিয়ে পড়ে চূর্ণি নদীতে। স্বভাবতই দূষিত হচ্ছে চূর্ণি। দিনের পর দিন সেই দূষণের মাত্রা বাড়ছে। মোকাবিলায় নিকাশির জল পরিশোধনের উপর জোর দিয়েছে রাজ্য সরকার। অর্থাৎ, শহরের নোংরা-আবর্জনা মিশ্রিত জল পরিস্রুত করেই ফেলা হবে চূর্ণিতে। এরজন্য রানাঘাটে গড়ে উঠছে পরিশোধন কেন্দ্র। মোট  ৪৭ কোটি টাকার প্রকল্পটির কাজ এখন মাঝপথে। সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে শুধু চূর্ণি নয়, হুগলি নদীর জলেও দূষণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে। কেননা, চূর্ণি মাজদিয়াতে মাথাভাঙা থেকে ভাগ হয়ে শিবনিবাস, হাঁসখালি, বীরনগর, আড়ংহাটা, রানাঘাটের ভিতর দিয়ে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে। মিশেছে শিবপুরের কাছে হুগলি নদীতে। 

    রানাঘাট এবং সংলগ্ন এলাকাতে চূর্ণির গুরুত্ব অপরিসীম। একদা নদীয়া ও কলকাতার মধ্যে প্রধান বাণিজ্য জলপথ ছিল এই নদী। এখন কোথাও কোথাও মজে গেলেও জেলার রুজিরুটির সঙ্গে চূর্ণি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। রানাঘাট শহর এবং সংলগ্ন এলাকাগুলির সমস্ত নিকাশি নালা এসে মিশেছে এই নদীতে। ফলে, দূষিত জল সরাসরি মিশছে চূর্ণিতে। সেটাই গিয়ে পড়ছে শিবপুরের মোহনায়। তাতে দূষিত হচ্ছে হুগলি নদীও। দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পর  দু’টি নদীর জল দূষণ ঠেকাতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছিল জাতীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। সেই মতো রানাঘাটে নিকাশি নালার জল পরিশোধন প্রকল্প গড়তে উদ্যোগী হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।  রাজ্য অর্থ কমিশন বরাদ্দ করে ৪৭ কোটি টাকা। 

    ঠিক হয়, শহরে তৈরি করা হবে জল পরিশোধনের তিনটি কেন্দ্র এবং একটি লিফটিং স্টেশন। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ অর্ধেকের বেশি শেষ হয়ে গিয়েছে। রানাঘাট মহকুমা আদালতের কাছে অবকাশ পার্ক এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে প্রথম পরিশোধন কেন্দ্রটি। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে সেটি। যদিও তার আগেই এই কেন্দ্রে জল পরিশোধনের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। একইভাবে রানাঘাটের পূর্ত দপ্তরের অফিস সংলগ্ন এলাকায় দ্বিতীয় পরিশোধন কেন্দ্র বা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি হয়ে গিয়েছে। এটিও সরকারিভাবে শীঘ্রই উদ্বোধন হতে চলেছে। তৃতীয় পরিশোধন কেন্দ্রটি তৈরি হওয়ার কথা শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডে। তবে, দীর্ঘদিন জমি-জটের কারণে আটকে ছিল এই প্রকল্পটি। রানাঘাট পুরসভা সূত্রের খবর, সম্প্রতি পরিশোধন কেন্দ্র তৈরির জন্য এক নম্বর ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত জমি চিহ্নিতকরণ এবং তা অধিগ্রহণের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এছাড়াও, একটি লিফটিং স্টেশন তৈরি করার কথা এই প্রকল্পে। এই কেন্দ্রটির কাজ হবে পরিশোধিত জলকে তুলে চূর্ণি নদীতে ফেলা। শহরের চার নম্বর ওয়ার্ডের বোসপাড়ায় তৈরি হচ্ছে এই লিফটিং স্টেশনটি। 

    রানাঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,‘রানাঘাট শহরের প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকাতেই নিকাশি নালা রয়েছে। ফলে শহরের নিকাশির জল পরিশোধন কেন্দ্রগুলিতে নিয়ে আসার মতো পর্যাপ্ত পরিকাঠামো আমাদের আগে থেকেই রয়েছে। রাজ্যের তরফে যে ৪৭ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে, তার কাজ পুরোদস্তুর চলছে। শহরের কুড়িটি ওয়ার্ডের জলই পরিশোধন করা হবে কেন্দ্রগুলিতে। ইতিমধ্যেই দুটি কেন্দ্রে দূষিত জল পরিশোধনের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের আগেই সেগুলি উদ্বোধন হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আশা করা যায়, চূর্ণি এবং গঙ্গার জল দূষণে অনেকটাই লাগাম টানা সম্ভব এই প্রকল্পের হাত ধরে।’  চূর্ণি নদী। নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)