• কেশিয়াড়ি রেল গেটে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে মানুষকে সচেতন করেন সন্তানহারা বৃদ্ধ
    বর্তমান | ০৭ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বেলদা: গেটের নীচ দিয়ে গলছেন কেন? নীচ দিয়ে যাবেন না। দেখছেন না ট্রেন আসছে। যে কোনও সময় বিপদ ঘটবে। বাড়িতে কিন্তু আপনার অপেক্ষায় অনেকে বসে আছে। বেলদার কেশিয়াড়ি মোড় রেলগেটের কাছে গেলে শুনতে পাবেন এমনই সাবধানবাণী। বছর ষাটেকের এক বৃদ্ধ খাঁকি পোশাক পরে হাতে একটি লাঠি নিয়ে পথচলতি মানুষকে সাবধান করছেন। বয়স তাঁর ৬০-৬৫ পেরিয়েছে। বাড়িতে তার কেউই নেই। বয়স্ক এই ব্যক্তির ছেলে মারা যাওয়ার পর কিছুটা মানসিক বিকৃতি ঘটেছে। তবে যেভাবে তিনি সন্তানহারা হয়েছেন, তিনি চান না, আর কারও পরিবারের কোনও ক্ষতি হোক। যখনই লেভেল ক্রসিংয়ে গেট পড়ছে তখনই ছুটে আসছেন ওই বৃদ্ধ। একপাশে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বারবার সচেতন করছেন যেন পড়ে থাকা রেলগেট টপকে কেউ পারাপার না করেন। সোম থেকে রবি, দিনের ব্যস্ত সময় প্রতিদিনই এই দৃশ্য চোখে পড়ে। খড়্গপুর-বালেশ্বর রুটে প্রতিদিন কয়েক হাজার মেল, এক্সপ্রেস ও মালবাহী ট্রেন যাতায়াত করে এই রেলপথ দিয়ে। বর্তমানে রেলের থার্ড লাইনের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় বার বার রেল গেট পড়তে থাকে। বন্ধ হয়ে যায় ব্যস্ততম এই রাস্তা। আটকে পড়ে অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে বহু যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ি। তৈরি হয় তীব্র যানজট। এই রেলগেটে ওপর দিয়ে ওভারব্রিজ নির্মাণের দীর্ঘদিনের দাবি বেলদাবাসীর। সম্প্রতি এই রেলগেট পেরতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন পথচলতি মানুষ। বার বার রেলের পক্ষ থেকে সচেতন করলেও কাজ হয়নি। আর এবার নিজের কাঁধে সেই দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন বছর ষাটেকের এই বৃদ্ধ। রেলগেটে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা এই বৃদ্ধ মানুষটির নাম বাদল গিরি। তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা থানার আসদা এলাকায় থাকেন। প্রতিদিন বাড়ি থেকে প্রায় দশ-বারো কিলোমিটার পায়ে হেঁটে তিনি আসেন বেলদার কেশিয়াড়ি মোড় রেলগেটে। সেখানে তিনি হাতে একটি লাঠি নিয়ে রেল গেটের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকেন। মানুষকে সচেতন করেন, যাতে গেট পড়া অবস্থায় কেউ গলে না যায়। আবার গেট উঠলে নিয়ম মেনে চলাচলের পরামর্শ দেন। কিন্তু কে বা শোনে কার কথা! উল্টে বাদলবাবুকে শুনতে হয় নানা বকুনি। বাদলবাবুর একমাত্র ছেলে শারীরিক অসুস্থতায় মাত্র ১৪ বছর বয়সে মারা যায়। তারপর থেকেই কিছুটা মানসিক বিকৃতি ঘটে তাঁর। কেউ সামান্য বিস্কুট চা খাওয়ালেই তাঁর সারাদিন চলে যায়। নাওয়া খাওয়া ভুলে তিনি মানুষকে সচেতন করে চলেন। আবার পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরে রাতে রান্না করে খান। সকাল হলেই ফের চলে আসা এই রেল গেটের সামনে। সন্তান হারানোর দুঃখ ভুলতে অন্যকে সচেতন করার চেষ্টা সমাজের শিক্ষিত মানুষকে চোখে আঙুল দিয়ে শিখিয়ে দিচ্ছে অনেক কিছুই। • নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)