• সিংহভাগ কলেজেই অর্ধেক আসন ফাঁকা
    বর্তমান | ০৭ আগস্ট ২০২৪
  • শ্রীকান্ত পড়্যা, তমলুক: আজ, বুধবার থেকে কলেজে প্রথম সেমেস্টারের ক্লাস শুরু হচ্ছে। অথচ, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বেশিরভাগ কলেজে অর্ধেক আসনেও ছাত্রভর্তি হয়নি। সংরক্ষিত আসনে মাত্র ১০-২০শতাংশ ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছেন। বেশকিছু জায়গায় অনার্সে অর্থনীতির ছাত্রছাত্রী পাওয়া যায়নি। শূন্য আসন ভরানোর জন্য জরুরিভিত্তিতে সংরক্ষিত আসনকে সাধারণ ক্যাটাগরির ছাত্রছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ করার দাবি তুলেছেন কলেজের অধ্যক্ষরা। করোনা মহামারীর সময়ের চেয়েও কলেজে ছাত্রভর্তির অবস্থা শোচনীয়। পদার্থবিদ্যা, গণিত, রসায়নবিদ্যা, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মতো বিষয়ে ছাত্রছাত্রী ভীষণ কম। গোটা ঘটনায় উদ্বিগ্ন অধ্যাপক মহল।

    মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর কলেজে অনার্স ও জেনারেল কোর্সে মোট আসন সংখ্যা ১৭৩০। মঙ্গলবার পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৮৩৪জন। অর্থাৎ অর্ধেক আসনেও ছাত্র পাওয়া যায়নি। অর্থনীতি বিষয়ে মোট তিনজন স্টেট এডেড কলেজ টিচার(স্যাক্ট) আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই সাবজেক্টে মোট ১২টি সিট বরাদ্দ করেছে। কিন্তু মুগবেড়িয়া কলেজে একজনও অর্থনীতিতে কেউ ভর্তি হননি। পদার্থবিদ্যায় মাত্র দু’জন ভর্তি হয়েছেন। ঩প্রিন্সিপাল স্বপনকুমার মিশ্র বলেন, বুধবার থেকে আমাদের কলেজ ফার্স্ট সেমেস্টারের ক্লাস হবে। অর্ধেক আসনে ছাত্রভর্তি হয়েছে। সংরক্ষিত বেশিরভাগ আসন ফাঁকা।

    নন্দীগ্রাম সীতানন্দ কলেজে মোট ৬০০জন পড়ুয়া ভর্তি হয়েছেন। যদিও আসন সংখ্যা ১২৮০জন। ষষ্ঠ সেমেস্টারের পরীক্ষা থাকায় ৮আগস্ট থেকে ক্লাস শুরু হবে। অধ্যক্ষ স্যামু মাহালি বলেন, ভর্তির পরিসংখ্যান সন্তোষজনক নয়। আমরা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে প্রথমদিনের ক্লাসে উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব আলোচনা করব। ওই ছাত্রছাত্রীরা যাতে অন্যদেরও ভর্তি হতে উদ্বুদ্ধ করে সেটাই লক্ষ্য। এরপর ভর্তির জন্য ‘মপআপ’ রাউন্ড শুরু হবে। কেউ ইচ্ছুক থাকলে ভর্তি হতে পারবে।

    ময়না কলেজে অনার্স ও জেনারেল কোর্স মিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা ১০৭২টি। অথচ ভর্তি হয়েছেন মাত্র ৪১১জন। পরিসংখ্যানের স্পষ্ট, ক্লাসরুম ফাঁকা পড়ে থাকবে। তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয়ে অনার্স ও জেনারেল মিলিয়ে মোট ২৪০০আসন। অথচ ভর্তি হয়েছেন ৮০৩জন। অর্থনীতিতে মাত্র একজন ভর্তি হয়েছেন। খেজুরি কলেজে মোট আসন সংখ্যা ন’শো। ভর্তি হয়েছেন প্রায় ছ’শো পড়ুয়া।

    প্রতিটি কলেজে মোট আসন সংখ্যার অর্ধেক সংরক্ষিত ক্যাটাগরির প্রার্থীদের জন্য। তফসিলি জাতিদের জন্য ২২শতাংশ, তফসিলি উপজাতিদের তিন শতাংশ, ওবিসি-এ এবং বি ক্যাটাগরির জন্য যথাক্রমে ১০ ও ছ’শতাংশ। এছাড়াও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়াদের জন্য ১০শতাংশ আসন সংরক্ষিত। এভাবে মোট আসনের অর্ধেক সংরক্ষিত ক্যাটাগরিতে পড়েছে। কিন্তু, সংরক্ষিত আসনে ছাত্রছাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। কোনও কলেজে ১০শতাংশ আবার কোথাও সেটা বেড়ে ২০শতাংশ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে। অধিকাংশ সংরক্ষিত আসন ফাঁকা। যদিও সাধারণ ক্যাটাগরির বেশকিছু ছাত্র আসনের অভাবে ভর্তি হতে পারছেন না বলে মুগবেড়িয়া কলেজের অধ্যক্ষ জানান। এই অবস্থায় সংরক্ষিত আসনকে ডি-রিজার্ভ করে সাধারণ প্রার্থীদের ভর্তির সুযোগ করে দেওয়ার দাবি তুলেছে অনেক কলেজ কর্তৃপক্ষ। ২০১৬সালের পর থেকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা নেই। শিক্ষক নিয়োগ ঘিরে জটিলতা অব্যাহত। তাই ডিগ্রি কোর্স নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রবল অনীহা এসেছে বলে অনেকেই মনে করছেন। পেশামুখী কোর্সের দিকে ঝুঁকছেন আজকের প্রজন্ম। সেকারণে অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা কিংবা রসায়ন বিদ্যায় স্নাতক হওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ নেই। এর ফলে আগামী দিনে স্কুল, কলেজে যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকার অভাব হবে বলেও অনেক অধ্যাপকের মত।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)