• অনুপ্রবেশ রুখতে সকাল থেকেই পদ্মায় নজরদারি
    বর্তমান | ০৭ আগস্ট ২০২৪
  • অভিষেক পাল, জলঙ্গি: ওপারে অশান্তির জেরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এক্সট্রিম হাই এলার্ট জারি হয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলায় মোট ১২৫ কিলোমিটার জুড়ে বর্ডার রয়েছে। যার মধ্যে ৪২ কিলোমিটার স্থল ও বাকি ৮৩ কিলোমিটার জল সীমান্ত আছে। জল সীমান্তের পাশাপাশি স্থলভাগের সীমান্তের অনেকাংশ কাঁটাতার বিহীন। এই বিস্তীর্ণ খোলা সীমান্ত দিয়ে ওপার বাংলা থেকে সহজেই অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। তাই বাড়তি তৎপর পুলিস ও বিএসএফ। সোমবার রাত থেকেই মুর্শিদাবাদ সীমান্তে বাড়তি তৎপর রয়েছে বিএসএফ। সীমান্তবর্তী থানাগুলি থেকে সীমান্তের গ্রাম ও মহল্লায় বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে স্পিডবোটে করে মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি সীমান্তে পদ্মা নদীতে বিএসএফের টহলদারি শুরু হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের এই অংশটি পুরোপুরি খোলা অবস্থায় রয়েছে। বিস্তীর্ণ মাঠ, জলাভূমি ও পদ্মার সরু খাল পেরলেই সহজে বাংলাদেশে থেকে ভারতে ঢুকে পড়া যায়। তাই অনুপ্রবেশকারীরা যাতে ঢুকতে না পারে, তারজন্য জলপথে সকাল থেকেই নজরদারি চালাচ্ছেন বিএসএফের আধিকারিকরা। স্পিডবোটের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের নৌকায় করেও জল সীমানায় নজরদারি চালায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। 

    জলঙ্গি, সাগরপাড়া ও রানিনগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মধ্যবর্তী জায়গায় বেশকিছু ভারতীয় নাগরিক চাষবাস করেন। সমস্ত জায়গাতেই এদিন সকালে চাষ করতে যাওয়ার সময় চাষিদের আইডেন্টিটি কার্ড চেক করা হয়। ফেরার সময় তাঁদের ভালো করে তল্লাশি করে এবং প্রত্যেকের আইডি কার্ডের সঙ্গে মুখ মিলিয়ে দেশে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। এমনকী জমিতে কাজ করার সময়ও তাঁদের উপরে নজরদারি চালায় সশস্ত্র সীমান্তরক্ষী। 

    সীমান্ত এলাকার থানাগুলিতে সমস্ত অফিসার, ভিলেজ পুলিস ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিজের এলাকায় বাড়তি নজরদারি চালানোর নির্দেশ দিয়েছে জেলা পুলিসও। জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, এক্সট্রিম হাই অ্যালার্ট জারি হয়েছে। আমরা সীমান্তবর্তী এলাকায় বাড়তি নজরদারি চালাচ্ছি। এমনকী বিএসএফের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি। 

    প্রতিটি থানার সিভিক ভলান্টিয়ার ও ভিলেজ পুলিসকে বর্ডার এলাকাগুলিতে গ্রাম ও পাড়া, মহল্লায় ঘুরে নজরদারি বাড়ানোর জন্য বলা হচ্ছে। বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে কেউ কোথাও সাম্প্রদায়িক কোনও কথাবার্তা বলছে কি না, সমাজমাধ্যমে সেগুলি পোস্ট করা থেকে সেই পোস্ট নিয়ে কোনও গন্ডগোলের সম্ভাবনার বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি নিজের এলাকায় যদি নতুন কাউকে দেখা যায় এবং যদি মনে হয় সে বাংলাদেশের বাসিন্দা, তৎক্ষণাৎ বিস্তারিত তথ্য জানাতে হবে পুলিস আধিকারিকদের। বাংলাদেশের ইস্যু নিয়ে কোনও এলাকায় মিটিং, মিছিল বা কোনও বৈঠক হলে, কারা করছে এবং কী উদ্দেশ্য রয়েছে, তা তৎক্ষণাৎ জানাতে হবে।

    জলঙ্গি সীমান্তের কয়েকজন গ্রামবাসী বলেন, একাত্তরের দিনগুলির কথা মনে পড়ছে। লক্ষ লক্ষ শরণার্থী এপার বাংলায় ঢুকেছিল। এবারও একই পরিস্থিতি। তবে আমরা চাই না ওই দেশ থেকে কেউ বিতাড়িত হয়ে এদেশে আসুক। সীমান্তে বিএসএফ যেন কড়া নজরদারি রাখে সেটাই আমাদের অনুরোধ। জলঙ্গির পাটচাষি অলিউর রহমান বলেন, অন্যদিনের তুলনায় এদিন সীমান্তে নজরদারিতে কড়াকড়ি ছিল। যখন পাট কাটার কাজ করছিলাম, বিএসএফ পাহারা দিচ্ছিল। ফেরার সময় ভালো করে চেক করেছে। প্রত্যেকের মুখের সঙ্গে আই কার্ড মিলিয়ে দেখছে।
  • Link to this news (বর্তমান)