• সব ঠিক থাকবে তো? বাংলাদেশ অশান্ত হতেই শঙ্কায় ভারতের গ্রাম
    বর্তমান | ০৭ আগস্ট ২০২৪
  • সন্দীপন দত্ত, মালদহ: অশান্ত ওপার, এপারে আশঙ্কা। কাঁটাতারের এদিকে বসবাসকারী সাধারণ গ্রামবাসীদের মুখে মুখে এখন একটাই প্রশ্ন, তাহলে কি ফের কট্টরপন্থীদের হাতে চলে যাচ্ছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র? চরম উৎকণ্ঠা, আশঙ্কায় সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষরা। শেখ হাসিনার শাসনকালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, তা বজায় থাকবে কি না সেই চর্চা শুরু হয়েছে মালদহ জেলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে।

    জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহ জেলায় বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত ১৫৮.৫ কিলোমিটার। এই জেলায় সীমান্তবর্তী গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা প্রায় ১০ থেকে ১২টি। বাংলাদেশের সঙ্গে জেলার একমাত্র স্থলবন্দরটি ইংলিশবাজার ব্লকের অন্তর্গত মহদিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে অবস্থিত। জেলার সদর শহর ইংলিবাজার এবং মহদিপুর স্থল বন্দরের মাঝেই রয়েছে একচিলতে ভারতীয় গ্রাম কেষ্টপুর। যে গ্রামের তিনদিক ঘেরা কাঁটাতার দিয়ে।  

    মঙ্গলবার দুপুরে মহদিপুর থেকে ইংলিশবাজার ফেরার পথে এপারের এই গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ল থমথমে পরিবেশ। গোটা গ্রামে যেন অঘোষিত কার্ফু চলছে। কাঁটাতারের মাঝে থাকা বড় বড় লোহার গেট বন্ধ। বিএসএফের অনুমতি নিয়ে এই গেট দিয়েই সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীরা ওপারে নিজেদের জমি চাষ করতে এবং ছাগল, গোরু চরাতে যান। এদিন পথেই দেখা হল মাঝবয়সী হরলাল হালদারের সঙ্গে। এদিন ওপারে যাওয়ার অনুমতি না মেলায় এপারেই ছাগল চরাচ্ছিলেন হরলাল। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন। সরকারে যেই বসুক, ভারতের সঙ্গে আর আগের মতো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে না বলেই মনে হচ্ছে।

    কিন্তু এখন থেকেই কী করে এই ভবিষ্যদ্বাণী করছেন? প্রশ্ন করতেই পাশেই উপস্থিত গ্রামের প্রৌঢ়া আশালতা সরকারের মন্তব্য, আমরা সীমান্তে থাকি। ওদেশে সমস্যা হলে আমরা এখান থেকে অনেকটাই আঁচ করতে পারি। কট্টরপন্থীরা ক্ষমতায় এলে আমাদের ওপারে নিজেদের জমিতে যাওয়া চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। জানি না আর কোন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে আমাদের।

    এদিন যেখানে দাঁড়িয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, সেখান থেকে কাঁটাতারের ওপারে দু’শো মিটার ভারতীয় ভূখন্ড এবং কয়েক মিটার ‘নো ম্যানস’ ল্যান্ড পার করে তারপর বাংলাদেশের মূল অংশ। যা সেদেশের রাজশাহী ডিভিশনের চাপাই নবাবগঞ্জ জেলার অন্তর্গত। কয়েক কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের মাটিতে চলা অশান্তি এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে না ঠিকই। তবে গ্রামবাসীরা পরিস্থিতি ঠিকই আঁচ করতে পারছেন। 

    কালিয়াচক-৩ ব্লকের আকুন্দাবাড়ী গ্রাম পঞ্চায়েতের মিলিক সুলতানপুর ভারতীয় গ্রাম হলেও সেটা কাঁটাতারের ওপারে। ওপারে আরেক ভারতীয় গ্রাম হল গোলাপগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের সুখপাড়া। এদিন এই সমস্ত গ্রামবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদল নিয়ে তাঁরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। 

    মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা বর্মন বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভালো হলে, সেটা ভারতের পক্ষেও ভালো। সেক্ষেত্রে সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা একটু নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন।  বন্ধ কেষ্টপুর যাওয়ার রাস্তা। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)