• তিস্তার গ্রাসে নিশ্চিহ্ন স্কুল, একমাস ধরে বন্ধ পড়াশোনা, মিড ডে মিল
    বর্তমান | ০৭ আগস্ট ২০২৪
  • ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: তিস্তা গিলে খেয়েছে আস্ত স্কুল। একমাস ধরে বন্ধ পড়াশোনা। হচ্ছে না মিড ডে মিলও। জলপাইগুড়ি সদর দক্ষিণ সার্কেলে কানাইনগর পাড়া নিউ প্রাইমারি স্কুলটি ছিল একেবারে তিস্তার চরে। বছরের বেশিরভাগ সময় নৌকায় নদী পেরিয়ে তারপর কয়েক কিমি দুর্গম হাঁটাপথে পৌঁছতে হতো স্কুলে। কখনও আবার নৌকায় উঠতে গেলে কিংবা নৌকা থেকে নেমে পেরতে হতো জল-কাদা। সেকারণে শিক্ষকরা সারাবছরই সঙ্গে নিয়ে যেতেন বাড়তি জামাকাপড়। চরম প্রতিকূলতাকে জয় করেই চলছিল স্কুলটি। কিন্তু, তিস্তার ছোবলে সব শেষ। তিস্তা যেভাবে এগিয়ে আসছে, তাতে আদৌও আর সেখানে স্কুল করা যাবে কি না সংশয়ে জেলা শিক্ষাবিভাগ। 

    যদি স্কুল না হয়, সেক্ষেত্রে স্থানীয় কালামপুর, কানাইনগরপাড়া, নিজতরফ, ধরধরাপাড়ার বাসিন্দাদের ছেলেমেয়েরা কোথায় পড়াশোনা করবে, তা নিয়েই প্রশ্ন। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) শ্যামলচন্দ্র রায় অবশ্য বলেছেন, জমি খুঁজছি। যদি কেউ জমি দান করেন, তাহলে ওখানে আবার স্কুল হবে। কিন্তু, যতদিন স্কুল না হচ্ছে, কারও বাড়ির উঠোনে কিংবা অন্তত ফাঁকা মাঠে পড়ানো যায় কি না তার চেষ্টা চলছে। 

    বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ৪ জুলাই স্কুল গিলতে শুরু করে তিস্তা। একদিনের মধ্যেই গোটা স্কুল নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। চেয়ার-টেবিল সরানোর সুযোগ মেলেনি। চারজন শিক্ষক ছিলেন। পড়ুয়ার সংখ্যা ৩৭। তিস্তার গ্রাসে স্কুল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পর দু’জন শিক্ষককে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্য স্কুলে। বাকি দুই শিক্ষককে এলাকায় গিয়ে ছাত্র পড়ানোর কাজ করতে বলা হয়েছে। 

    স্কুলের দুই শিক্ষকের একজন হরিপদ রায় বলেন, নদী পেরিয়ে রোজই আসার চেষ্টা করছি। কিন্তু এসে কি হবে? কোথায় পড়াব! যেখানে স্কুল ছিল, সেখানে এখন নদী বইছে। স্কুলের কয়েকটা জিনিসপত্র বাঁচাতে পেরেছেন বাসিন্দারা। সেগুলি আগে যেখানে স্কুল ছিল, সেখান থেকে দু’কিমি দূরে একটি মাঠে রাখা হয়েছে। মিড ডে মিলও দেওয়া যাচ্ছে না। 

    বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বর্ষার সময় হেলাপাকড়ি হয়ে নৌকায় চেপে তিস্তা পার হতে হয়। তারপর প্রায় দু’কিমি হেঁটে পৌঁছতে হয় কানাইনগরপাড়া নিউ প্রাইমারি স্কুলে। বর্ষা বাদে অন্যসময় বোয়ালমারি হয়ে যাওয়া যায়। এতে একটু দূরত্ব কমে। কিন্তু, এক্ষেত্রেও নদী পেরনোর পর পার করতে হয় নালা, গর্ত। তাঁদের দাবি, যেখানে স্কুল ছিল, সেখানে এখন নদী। তাছাড়াও তিস্তা অন্তত দু’শো মিটার এগিয়ে এসেছে। শিক্ষক হরিপদ রায়ের বক্তব্য, ভবন তৈরির পর স্কুল চালু করতে গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। ততদিন পড়াশোনা বন্ধ থাকলে পড়ুয়াদের স্কুলে আনা সমস্যার হয়ে দাঁড়াবে। তাই যাতে কোনও অস্থায়ী পরিকাঠামো করে ছেলেমেয়েদের পড়ানো যায়, তার চেষ্টা চলছে।  তিস্তার ভাঙনে নিশ্চিহ্ন কানাইনগর পাড়া নিউ প্রাইমারি স্কুল। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)