• বাংলাদেশজুড়ে ‘ধর-মার’ স্লোগান, ওপার থেকে ফিরে বললেন শিলিগুড়ির দম্পতি
    বর্তমান | ০৭ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ফুলবাড়ি ও সংবাদদাতা, মেখলিগঞ্জ: ‘ধর-মার’— এটাই বাংলাদেশের স্লোগান। মঙ্গলবার বাংলাদেশ থেকে ফুলবাড়িতে ফিরেই একথা বলেন শিলিগুড়ির দম্পতি জগদীশ রায় ও পিঙ্কি রায়। তাঁরা ট্রেকারে চেপে চার ঘণ্টা জার্নি করে দেশে ফেরেন। সেই দেশের হাঙ্গামার ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে বিস্মিত তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, আর বাংলাদেশে যাব না। এদিকে, এদিন দুপুর পর্যন্ত ফুলবাড়ি ও মেখলিগঞ্জ ইমিগ্রেশন চেক পোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে থেকে ভারতে ফিরেছেন প্রায় ২০ জন। এনিয়ে দু’দিনে ফুলবাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন ৫৭ জন। 

    শিলিগুড়ি শহর সংলগ্ন শিবমন্দির এলাকায় ওই দম্পতির বাড়ি। জগদীশবাবু পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাঁর স্ত্রী পিঙ্কিদেবী গৃহবধূ। ২৫ দিন আগে তাঁরা বাংলাদেশে আত্মীয়র বাড়িতে যান। সেই দেশের নীলফামারি জেলায় তাঁদের আত্মীয়র বাড়ি। ঢাকায় ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁদের। হাঙ্গামার জেরে তা হয়নি। এদিন ফুলবাড়িতে পা রেখে তাঁরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়েন। 

    জগদীশবাবু বলেন, ভ্রমণের উদ্দেশ্যেই ১২ জুলাই বাংলাদেশে পাড়ি দিই। কয়েকদিন পরই সেখানে গোলমাল শুরু হয়। এখন সেখানে নৈরাজ্য চলছে। বাডি, ঘর, দোকান ভেঙে লুটপাট চলছে। আগুন জ্বলছে। সেখানে একটাই স্লোগান এখন ‘ধর, মার’। এজন্য গত ২৪ ঘণ্টা ঘুমতে পারিনি। তাই দু’হাজার টাকায় ট্রেকার ভাড়া করে নীলফামারি থেকে এখানে ফিরেছি। আর বাংলাদেশে পা দেব না। তাঁর স্ত্রীর চোখেমুখেও ছিল উদ্বেগের ছাপ। 

    পিঙ্কিদেবীর বক্তব্য, বাংলাদেশে এমন অরাজকতা তৈরি হবে, কল্পনাও করতে পারছি না। ফুলবাড়িতে পা রেখে দম ফেলছি। কিন্তু, সেখানকার আত্মীয়দের জন্য দুশ্চিন্তায় রয়েছি। 

    এদিন বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলা থেকে বাইকে ফুলবাড়ি সীমান্ত পর্যন্ত আসেন আরএক ভারতীয় অতুল বর্মন। উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে তাঁর বাড়ি। তিনি বলেন, ১৯ জুলাই বাংলাদেশে ঘুরতে যাই। সেখানকার পরিস্থিতি দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। ওই দেশের রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। তাই গ্রামের ভিতর দিয়ে বাইকে ছ’ঘণ্টা জার্নি করে এখানে এসেছি। 

    কয়েকজন বাংলাদেশিও এদিন এখানে আসেন। তাঁদের অধিকাংশই এখানে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। তাঁদেরও বক্তব্য, গোটা দেশ অশান্ত। এখন ভাঙচুর ও লুটপাট চলছে। কবে যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বুঝতে পারছি না। 

    উত্তরবঙ্গের ইমিগ্রেশন চেকপোস্টগুলির মধ্যে ফুলবাড়ি একটি। প্রশাসন সূত্রের খবর, এদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে এখানে এসেছেন ১২ জন। যারমধ্যে সাতজন ভারতীয় এবং পাঁচজন বাংলাদেশি। এখান থেকে ওপারে পাড়ি দিয়েছেন ৬৮ জন। যারমধ্যে দু’জন ভারতীয় এবং ৬৬ জন বাংলাদেশি। সোমবার এই চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আসেন ৪৫ জন। যারমধ্যে ১২ জন ভারতীয় এবং ৩৩ জন বাংলাদেশি। এখান থেকে সেই দেশে পাড়ি দেন ৮১ জন। যারমধ্যে তিনজন ভারতীয় এবং ৭৮ জন বাংলাদেশি। এদিন বাংলাদেশে ফেরার পথে সেই দেশের শিক্ষক আজাহার আলি বলেন, চিকিৎসার জন্য এখানে এসেছিলাম। দেশে ফিরছি। দেশের পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। 

    এদিন দুপুর পর্যন্ত চ্যাংরাবান্ধা চেকপোস্ট দিয়ে একজন ভারতীয় ও সাতজন বাংলাদেশি এসেছেন। আর সেই দেশে ফিরেছেন ৩২ জন বাংলাদেশি। যাদের মধ্যে ১৬ জন পর্যটক ছাড়াও মেডিক্যাল অ্যাটেনডেন্ট, সাংবাদিক, চিকিৎসা ও ব্যবসার সূত্রে আসা নাগরিকরাও রয়েছেন। 
  • Link to this news (বর্তমান)