‘ফের ভারতের ভিসা পাব তো!’ তাণ্ডবে ক্ষুণ্ণ ভাবমূর্তি, উদ্বেগে বাংলাদেশিরা
বর্তমান | ০৭ আগস্ট ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মুকুন্দপুরের এক গলিতে ঢুকে সরু অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে উঠলে দেখা যাবে ছোট্ট একটি ঘর। সেখানে আছেন জাকির আহমেদ, তাঁর স্ত্রী, ভাই ও ছোট মেয়ে। জাকিরের কিডনিতে অসুখ। ময়মনসিংহ থেকে চিকিত্সার জন্য কলকাতায় এসেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে বৃষ্টির মধ্যেই জাকিরের ভাই ওষুধ আনতে গিয়েছিলেন। এক বছরের ওষুধ কিনে ফিরলেন। ঘরে ঢুকে বললেন, ‘আবার কবে আসতে পারব বুঝতে পারছি না। যতটা নিয়ে যাওয়া যায়, ততটা নিয়ে যাচ্ছি।’ তারপর মুখ নামিয়ে নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমরা চলে যাব। তারপর ভারত আবার ভিসা দেবে তো? এত ঝামেলা হচ্ছে। ভবিষ্যৎ ভেবে আশঙ্কা হয়।’
চিকিত্সার জন্য কলকাতায় আসেন বাংলাদেশের বহু নাগরিক। অনেকে প্রায় সর্বস্ব খরচ করেও আসেন। সে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল হওয়ার পর থেকেই তাঁদের মনে ভীতির সঞ্চার হচ্ছে। জাকির আহমেদ বললেন, ‘আমরা তো নিরপেক্ষ মানুষ। রাজনীতিতে থাকি না। চিকিত্সা করাতে এসেছি। বাড়ির লোক খুবই চিন্তায় রয়েছেন। মেয়েটিকেও নিয়ে এসেছি। বাড়িতে বৃদ্ধা মা, ছেলে আছে। খুব চিন্তায় রয়েছি।’ বেশি পরিমাণ ওষুধ কিনে সীমান্ত পেরতে পারবেন না জানেন। বলেন, ‘মাঝে মধ্যে বেশি ওষুধ নিয়ে গেলে আবার সীমান্তে আটকায়। তখন আর এক সমস্যা।’ দুপুরে ডাক্তার দেখিয়ে স্ত্রীয়ের সঙ্গে হোটেলে ফিরছিলেন মহম্মদ হজরত আলি। বললেন, ‘ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। সে বলছে, এখনই দেশে না আসতে। কিছুদিন বাদে আসতে বলছে। সেখানকার হাসপাতালগুলোর অবস্থা নাকি সেই একাত্তরের মতো হয়ে গিয়েছে।’
বাইপাসের ধারে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বহু সংখ্যক বাংলাদেশি চিকিত্সার জন্য আসেন। এদিন দেখা গিয়েছে, হাসপাতালগুলির ভিতরে বাংলাদেশের নাগরিকরা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর আলোচনায় মগ্ন। একজন আর একজনের সঙ্গে দেখা হতেই জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী খবর পাচ্ছেন?’ উত্তর এল, ‘মোবাইলে তো সারাক্ষণ দেখছি। সেখান থেকেই যা খবর আসার আসছে।’ এরই মাঝে অনেকের আবার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। তাঁরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন। কেউ উপ হাইকমিশনের অফিসে মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনও জানাচ্ছেন। দীর্ঘ ছ’মাস চিকিত্সার জন্য কলকাতায় ছিলেন তাহমিন আফতাব। তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষের পথে। এদিন দুপুরে সপরিবারে ছুটলেন বিমান ধরতে। যাওয়ার আগে বললেন, ‘এই দেশে এসে চিকিত্সা করাতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। তার মধ্যে আবার দেশের ওই অবস্থা। তাড়াতাড়ি ছুটতে হচ্ছে দেশে।’ মুকুন্দপুরে একটি হাসপাতালের কাছে অন্য একটি বাড়ির ছোট একটি ঘরে রয়েছেন বিউটি বিবিরা। তাঁরা তিনজন মিলে আছেন। চিকিত্সার জন্য কলকাতায় এসেছিলেন। হঠাৎ স্বামীর শরীর খারাপ হয়। তারপর স্বামীকেও নিয়ে আসে তাঁর ছেলে। এই মুহূর্তে স্বামী হাসপাতালে ভর্তি। বিউটি বললেন, ‘দিনে ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে এখানে রয়েছি। দেশ থেকে খবর আসছে প্রবল ঝামেলা হচ্ছে। স্বামীকে ছাড়লেই ফেরার ব্যবস্থা করব।’