• সব কোর্টে ভিডিও সাক্ষ্য, তারিখ পে তারিখ আর নয়, মামলার নিষ্পত্তি হবে দ্রুত
    বর্তমান | ০৭ আগস্ট ২০২৪
  • শুভঙ্কর বসু, কলকাতা: ‘তারিখ পে তারিখ...তারিখ পে তারিখ!’ ৯০-এর দশকের এই বিখ্যাত ফিল্মি ডায়লগ আর বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা যে সমার্থক, ভুক্তভোগী মাত্রই তা হাড়ে হাড়ে জানেন। তাই বাধ্য না হলে কেউ আদালতের কড়া নাড়েন না। এই পরিস্থিতি বদলাতে এবার যুগান্তকারী রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। ফৌজদারি হোক বা দেওয়ানি—যেকোনও মামলায় এতদিন সব স্তরের সংশ্লিষ্ট সরকারি আধিকারিককে সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। একটি মামলার রায়ে কলকাতা হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিল, সরকারি আধিকারিকদের সশরীরে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দেওয়া আর বাধ্যতামূলক নয়। রাজ্যের সব আদালতে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সাক্ষ্য দিতে পারবেন আমলা থেকে পুলিস, চিকিৎসক, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ থেকে সব স্তরের সরকারি আধিকারিক। সেই মতো সব আদালতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এই রায়ের ফলে বিচার ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে এবং মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হবে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। 

    সম্প্রতি রাজ্যের সংশোধনাগারগুলির সামগ্রিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চে। সেই মামলায় রাজ্যের তরফে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর রুদ্রদীপ্ত নন্দী দাবি করেন, নিম্ন আদালতগুলিতে সরকারি আধিকারিকদের সশরীরে হাজিরা দিয়ে সাক্ষ্য প্রদানের নিয়ম থাকায় বিচারপ্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটছে। তাই প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া চালু প্রয়োজন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্দেশনামায় ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, অবিলম্বে রাজ্যের সমস্ত নিম্ন আদালতের বিচারককে ‘রুলস ফর ভিডিও কনফারেন্সিং ফর কোর্টস’ ও বিএনএসস-এর ২৫৪(২) ধারা কার্যকর করে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। সম্প্রতি আইনমন্ত্রকের তরফে সংসদে পেশ করা তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত রাজ্যের সব আদালতে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা ছিল ২৯,৭৩,৬০৭। এর মধ্যে মাত্র ৪, ৯৮,৪৪৩টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। রুদ্রদীপ্তবাবু বলেন, ‘বিশেষত ফৌজদারি মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হবে এই রায়ের ফলে। অনেক সময় দেখা যায়, রাজ্যের কোনও জেলা আদালতে চলা মামলায় যে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ কাজ করেছিলেন, এখন তিনি দিল্লিতে। সেই মামলায় সাক্ষ্যদানের জন্য তাঁকে দিল্লি থেকে সংশ্লিষ্ট জেলা আদালতে ছুটে আসতে হতো। কোনও কারণে না আসতে পারলে মামলা পিছিয়ে যেত। এই ধরনের সমস্যা আর থাকবে না।’ এই মামলার আদালতবান্ধব তথা আইনজীবী তাপস ভঞ্জ বলেন, ‘এই নির্দেশের ফলে সরকারি আধিকারকিরাও সময় মতো সাক্ষ্যদানে বাধ্য থাকবেন। উপকৃত হবেন মামলাকারীরা।’
  • Link to this news (বর্তমান)