• কোন্নগরে বসে চোখ ভেজে ভাষা শহিদের ভাইয়ের
    বর্তমান | ০৭ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: ‘শেখ হাসিনা বা তাঁর সরকারের উপর রাগ থাকতেই পারে। কিন্তু তার জন্য জাতির জনকের মূর্তি কেন ভাঙতে হবে? কেনই বা ভাষা শহিদদের স্মৃতি সৌধ আক্রান্ত হবে?’ বাংলাদেশ থেকে বহু দূরে এপার বাংলায় বসে এই আক্ষেপ আহসানুর রহমানের। একডাকে চেনার মতো মানুষ তিনি নন। কোন্নগরে জরাজীর্ণ এক বাড়িতে থাকেন। অতি সাধারণভাবে জীবন কাটান। এই আহসানুর রহমানের অন্য একটি পরিচয়ও আছে। তিনি বাংলাদেশের ভাষা শহিদ শফিউর রহমানের খুড়তুতো ভাই। দুই ভাইয়ের শৈশব-কৈশোর একসঙ্গেই কেটেছিল কোন্নগরের বাড়িতে। বাংলাদেশের বর্তমান আন্দোলন আন্দোলিত করছে কোন্নগর ধাড়সার জিটি রোডের উপর থাকা জরাজীর্ণ বাড়ির বাসিন্দাটিকেও। মোটেও স্বস্তি পাচ্ছেন না বছর পঞ্চাশের মানুষটি।

    আহসানুরবাবু নিজেও লড়ছেন এক লড়াই। ভাষা শহিদের ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই চালাচ্ছেন। তাই বিপ্লবের লড়াইয়ের ভাষা, আবেগ তাঁর পরিচিত। তবুও আক্ষেপ হয়। বলেন, ‘শিকড় কেটে দেওয়া কোনও আন্দোলন হতে পারে না। একটি জাতির সম্পদ তার ইতিহাস। কোনও গণ আন্দোলন বা অভ্যুত্থানেই সেই ইতিহাস আক্রান্ত হওয়া উচিত নয়। যে দেশের জন্য শফিউরভাই জীবন দিয়েছেন, সেখানে প্রতিবাদের জন্ম হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ইতিহাসকে সম্মান করেই তা করতে হবে।’ বলতে বলতে নোনাধরা দেওয়াল থেকে বর্ষায় চুঁইয়ে পড়া জলের মতো চোখ ভেজে মানুষটির। আদালতের দলিল দস্তাবেজ নিয়ে তাঁর জীবিকা চলে। তাই পেশাদার জায়গা থেকে একটু সতর্ক। বলেন, ‘বাংলাদেশের আন্দোলন, তার কার্যকারণ নিয়ে কিছু বলার নেই। মানুষ যেমন বুঝেছেন তেমনই পদক্ষেপ করেছেন। কিন্তু ইতিহাসের উপর আক্রমণ অসহনীয়।’ আর বলেন, ‘আন্দোলনের জয় হয়েছে। জয়ীর ভূমিকা হবে উদার। তাহলে এত হিংসা, রক্ত, আগুন কেন? ওই দেশের মাটিতে মিশে শফিউর সহ বহু ভাষা শহিদের রক্ত। সেই ইতিহাসও কি ভুলেছে নতুন প্রজন্ম!’

    আহসানুর কখনও যাননি বাংলাদেশে। তবে এক বিপ্লবীর সঙ্গে বেড়ে ওঠার স্মৃতি ও আত্মবলিদানকে পাথেয় করে এগিয়ে চলেছেন। এখনও ‘বাংলাদেশ’ শব্দটা শুনলে এই প্রৌঢ়ের বুকে অতিরিক্ত রক্ত বয়। চোখে ভাসে অদেখা জামালপুর নামে এক কসবা। যেখানে চিরনিদ্রায় শুয়ে তাঁর প্রিয় দাদা। 

    তাঁদের বুকের রক্তে জন্ম হয়েছিল আধুনিক বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন। কোন্নগরের ধাড়সার ক্ষয়াটে বাড়িতে বসে সে কথা বিড়বিড় করেন আহসানুর। আর বলেন, ‘ইতিহাস ভুলো না বাংলাদেশ। উদার হয়ে ওঠো।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)