এই সময়: অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি জন্মভূমির। ঘরে ফেরার চিন্তা তো আছেই। সেই সঙ্গে পরিবারের কথা ভেবে আরও বেশি দুশ্চিন্তায় ঢাকার বাসিন্দা মনিরুল আহমেদ। গত সোমবার থেকে তিনি রয়েছেন সদর স্ট্রিটের হোটেলে। মনিরুলের কথায়, ‘মা, দাদা-বৌদি সবাই বাড়িতে। সোমবার রাতে যোগাযোগ হয়েছিল। তারপর কথা হয়নি। ওরা ভালো থাকুক এই প্রার্থনা করা ছাড়া এখানে বসে কি-ই বা করতে পারি?’মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় ফেরার টিকিট বুকিং করা ছিল তাঁর। কিন্তু, সেই বিমান বাতিল হওয়ায় কলকাতাতেই আটকে গিয়েছেন পেশায় ব্যবসায়ী মনিরুল। বন্ধ ট্রেনও, বেশ কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সির দপ্তরে গিয়ে বাসের টিকিটের খোঁজ করেও হতাশ হতে হয়েছে তাঁকে।
একই অবস্থা পাবনার বাসিন্দা শামিমা খাতুনেরও। তাঁরও ফেরার কথা ছিল এদিন। কিন্তু, বাসের টিকিট পাননি। মারকুইস স্ট্রিটের হোটেল বসে মেয়ের বিয়ের কেনাকাটার জন্য কলকাতায় আসা শামিমা বলছিলেন,‘দোকান থেকে শুরু করে আমাদের এলাকার বাড়ি ঘর নির্বিচারে ভাঙচুর করা হয়েছে। পুরো পরিবার ওখানে। কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।’
সোমবার রাতে যখন ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে তখনও পর্যন্ত কারও কোনও ক্ষতি হয়নি। তবে পরিস্থিতি যে কোনও সময়ে বদলে যেতে পারে এই আশঙ্কাতেই অস্থির স্কুল শিক্ষিকা শামিমা। কলকাতার সদর স্ট্রিট, মারকুইস স্ট্রিট, মির্জা গালিব স্ট্রিটের হোটেল, গেস্ট হাউসে বসে দুশ্চিন্তাই এখন সঙ্গী ওপার বাংলার বাসিন্দাদের। কেউ চিকিৎসা, কেউ বা ব্যবসা, বিয়ের কেনাকাটা-সহ নানা কাজে বাংলাদেশের অনেক বাসিন্দা নিয়মিত আসেন এ শহরে।
এবারেও এসেছিলেন। কিন্তু, সোমবার শেখ হাসিনা ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়ার পর থেকেই যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে ঘোর বিপদে পড়েছেন পদ্মাপারের বাসিন্দারা। পাবনা, ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রামে আত্মীয় পরিজনরা কি অবস্থায় আছেন তা নিয়ে চিন্তা, অন্যদিকে টাকাপয়সা শেষ হয়ে যাওয়ায় কীভাবে এখানে থাকবেন তা ভেবেই ঘুম উড়েছে অনেকের।
গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় ঘুরতে এসেছিলেন ফারুক আখতার। সোমবার তাঁর বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু আটকে গিয়েছেন কলকাতায়। ফারুকের কথায়,‘যা টাকা এনেছিলাম সবই প্রায় শেষ। বাড়ির লোক যে টাকা পাঠাবে সেই উপায়ও নেই। কারণ, ওখানে ইন্টারনেটও কাজ করছে না।’
এই পরিস্থিতিতে গেদে-দর্শনা হয়ে ফেরার কথা ভাবছেন অনেকে। কারণ, ওই পথে এখনও কোনও সমস্যা নেই বলে জেনেছেন ফারুক। খিদিরপুরের বাসিন্দা ট্রাভেল এজেন্ট মিনাজ শেখের কথায়,‘সোমবার দুপুরের পর থেকেই বাংলাদেশের বাসিন্দারা টিকিটের জন্য আসছেন। কিন্তু, ট্রেন বন্ধ। খুব কম সংখ্যক বাস চলছে। বেসরকারি সংস্থার বিমানও বন্ধ। ফলে, অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।’