স্টাফ রিপোর্টার: দুর্ঘটনা রোধে এবার টোটো চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আনতে চাইছে সরকার। এ বিষয়ে পরিবহণ দপ্তরকে এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশ এবং পরিবহণ দপ্তরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ছিলেন পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। সেখানেই শহরতলি এবং জেলায় অস্বাভাবিক হারে টোটো বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। তখনই মুখ্যমন্ত্রী জানান, টোটো নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করতে হবে। তবে তা কখনওই কাউকে কর্মহীন করে নয়। এই তিন চাকার যানকে একটা শৃঙ্খলায় আনার প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে মমতা সরকারি বাসের ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানোর কথা বলেন পরিবহণমন্ত্রীকে। রাস্তায় সরকারি বাস কমছে, কিন্তু তেলের জন্য খরচ বাড়ছে কেন, সেপ্রশ্ন এদিন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রয়োজনে কর্মীদের শিফট বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার জানিয়ে দেন, যাত্রীদের সরকারি বাস পেতে যেন সমস্যা না হয় সেটা দেখতে। একইসঙ্গে সরকারি চার্টের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া যেন কেউ না নেয় তা নজর রাখতে বলা হয়েছে। নবান্ন সূত্রে খবর, স্নেহাশিসও সরকারি বাসের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। সেখানে কত নতুন বাস নেমেছে। পুরনো বাস কত সারিয়ে নামানো হয়েছে, তা তুলে ধরা হয়। কেন সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলায় যে, ১১৮০ টি নতুন বাস রাজ্য পাচ্ছে না, সেই প্রসঙ্গও ওঠে এদিনের আলোচনায়। এই বাসগুলো সবই বৈদ্যুতিক বাস। এগুলো এলে পরিবেশ দূষণ অনেকটাই কমবে।
প্রায় সওয়া এক ঘণ্টার বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন, রাজ্যের মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকা, ডিজি রাজীব কুমার, স্বরাষ্ট্রসচিব, কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, পরিবহণসচিব সৌমিত্র মোহন, পরিবেশ দপ্তরের সচিব, এডিজি আইনশৃঙ্খলা-সহ পুলিশ-প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারা। বৈঠকে ছিলেন পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান মদন মিত্রও। সেখানে পরিবহণ দপ্তরের রাজস্ব সংগ্রহ নিয়েও বিস্তারিত তথ্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি আলোচনা হয় ট্রাম নিয়েও। দুর্ঘটনা কমাতে যে রুটে ট্রাম চলছে না সেখানকার লাইন তুলে ফেলার কথা বলা হয়েছে। পরিবহণ দপ্তরের তরফে জয়রাইড হিসাবে ট্রামকে রেখে দেওয়ার প্রস্তাবের কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়।
তবে প্রশাসনের বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে টোটো। রাস্তায় টোটোর বাড়বাড়ন্তে শুধু যে যানজট বাড়ছে তাই নয়, দুর্ঘটনাও বাড়ছে। ইতিমধ্যেই রাজ্য এবং জাতীয় সড়কের উপর টোটো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পরিবহণ দপ্তর। তবে তাতেও যে তাকে নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছে তেমনটা নয়। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, মফস্বল, জেলায় তো বহু রাস্তায় যাত্রীর থেকে টোটোর সংখ্যা বেশি। তাতে না লাগে কোনও পারমিট, না রেজিস্ট্রেশন, না ট্যাক্স। ফলে এই গাড়ি থেকে সরকারের তো কোনও আয় হয়ই না। উল্টে রাস্তায় টোটোর দৌরাত্ম্যে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। সেকথা পুলিশের পক্ষ থেকে এদিন জানানো হয়। আর তারপরই টোটো নিয়ে এসওপি তৈরির নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিন চাকার এই যান নিয়ন্ত্রণে তাই এবার নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করবে পরিবহণ দপ্তর।