• শতাব্দী প্রাচীন বিল্ডিংয়েই চলছে পুরুলিয়া আদালতের কাজকর্ম, ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা
    বর্তমান | ০৮ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: কয়েক কোটি টাকা খরচে তৈরি হয়েছে পুরুলিয়া জেলা আদালতের নতুন ভবন। তৈরির পর থেকে প্রায় তিন বছর কেটে গেলেও এখনও নতুন ভবন চালুই হল না। অথচ এরইমধ্যে নতুন ভবনের দেওয়ালে ফাটল দেখা দিতে শুরু করেছে। ঘটনায় জেলাজুড়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, আদালত চত্বরের অবস্থাও বেহাল হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলে ভেসে যায় আদালত চত্বর। সবমিলিয়ে চরম অব্যবস্থা তৈরি হয়ে রয়েছে। আদালতের আইনজীবীদের দাবি, অবিলম্বে নতুন ভবন মেরামত করে আদালতের সমস্ত কাজকর্ম সেখানে শুরু করা হোক। তা না হলে কর্মবিরতিরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে পুরুলিয়া বার অ্যাসোসিয়েশন। 

    পুরুলিয়া জেলা আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্রিটিশ আমলে পুরুলিয়া যখন বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল, তখন মানভূম, সিংভূম ও সম্বলপুর জেলার সদর আদালত ছিল আজকের পুরুলিয়া কোর্ট। ১০০ বছরের বেশি প্রাচীন ইতিহাস প্রসিদ্ধ এই আদালতের বর্তমানে বেহাল দশা। নোংরা আবর্জনায় ঢেকেছে আদালত চত্বরে। প্লাস্টিক, চায়ের কাপে বুজে গিয়েছে নিকাশি নালা। তাতে জল জমে রয়েছে। নালা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি আরও করুণ হয়। আদালত চত্বর জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ব্যাপক সমস্যায় পড়তে হয় আদালতে বিভিন্ন কাজে আসা সাধারণ মানুষ থেকে আইনজীবীদের। শুধু তাই নয়, বর্ষায় আদালতের পুরাতন ভবনেরও ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। সংস্কারের অভাবে আদালতের দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। দোতলার মেঝেতে ফাটল দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে চরম অব্যবস্থার মধ্যেই কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন আইনজীবীরা।

    এনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের পর নতুন ভবনের অনুমোদন মেলে। নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় পূর্তদপ্তরকে। সূত্রের খবর, কয়েক কোটি টাকা খরচ করে সেই ভবন নির্মাণ হয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সেই নতুন ভবনে বিচারপ্রার্থীদের থাকা ও বসার ব্যবস্থা, সরকারি আইনজীবীদের পৃথক পৃথক চেম্বার, লিফট সহ সমস্ত ব্যবস্থাই থাকছে। শুধু তাই নয়, এতদিন ধরে যে পুলিস কোর্টটি পুরাতন আদালত চত্বরের বাইরে ছিল, তাও নতুন ভবন নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়। ২০২২ সালের আগেই আদালতের কাজকর্ম নতুন ভবনে শুরু হওয়ার কথা ছিল। যদিও তা শুরু হয়নি আজও। বুধবার নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়ে পুরুলিয়া জেলা বিচারকের কাছে বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে চিঠিও দেওয়া হয়। সংগঠনের সম্পাদক অতুলচন্দ্র মাহাত বলেন, তিন বছর আগে তৈরি হয়ে পড়ে থাকা নতুন ভবন চালুর জন্য বিচারকের কাছে আবেদন জানিয়েছি। তাঁর সংযোজন, নতুন ভবনে কেন ফাটল ধরল সেব্যাপারেও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

    এই আদালত চত্বরেই দীর্ঘদিন ধরে টাইপ রাইটারের কাজ করে আসছেন প্রদ্যুৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, সঠিক নিকাশি নালা না থাকায় বৃষ্টি হলে আদালত চত্বরে জল জমে। জমা জল মশামাছির আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের জন্য কোনও শৌচাগার পর্যন্ত নেই। সেই ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। 

    জানা গিয়েছে, নতুন ভবন নির্মাণের জন্য আদালত চত্বরে থাকা শৌচাগারগুলি ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। ফলে প্রতিদিন আদালতে নানা কাজ নিয়ে আসা মানুষজন যত্রতত্র প্রস্রাব করছেন বলে অভিযোগ। ফলে সমগ্র আদালত চত্বরে দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেইসঙ্গে, আদালতে বিকল্প জেনারেটরের ব্যবস্থাও নেই। ফলে কারেন্ট গেলে আদালতও আঁধারে ডুবে যায়।
  • Link to this news (বর্তমান)