• দ্বারিকাপল্লি কুমার সাহেব শিক্ষায়তন স্কুলের হাত ধরে বদলেছে নয়াগ্রাম
    বর্তমান | ০৮ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রাম: ঝাড়গ্রাম জেলার প্রত্যন্ত এলাকা নয়াগ্রামের সুবর্ণরেখা তীরবর্তী ছোট্ট একটি গ্রাম। একসময় গ্রামে ছিল না শিক্ষার আলো। এর ফলে পড়াশোনা শব্দটার সঙ্গে অনেকেই পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু  এলাকার ভোল বদলে দিয়েছে নয়াগ্রাম ব্লকের দ্বারিকাপল্লি কুমার সাহেব শিক্ষায়তন স্কুল। আজ এই স্কুল এলাকার পড়ুয়াদের নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। অনেকেই গ্রামের স্কুলে পড়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরে কর্মরত। জানা গিয়েছে, স্কুলের উদ্যোগে নতুন দিশা দেখছেন গ্রামবাসীরা। স্কুলের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে নানা কাজ করা হয়েছে। 

    ২০০৪ সালে দ্বারিকাপল্লি কুমার সাহেব শিক্ষায়তনের প্রধান শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন বিপ্লবকুমার দে। তাঁরই প্রচেষ্টায় স্কুলের রূপরেখা বদলে গিয়েছে। তিনি বলেন, নয়াগ্রাম বাসস্ট্যান্ড থেকে অনেকটাই দূরে অবস্থিত এই স্কুল। খুবই কম পরিকাঠামোযুক্ত একটি স্কুল ছিল। আমার প্রবল ইচ্ছা ও আত্মবিশ্বাস ছিল একদিন স্কুলটিকে পরিকাঠামো তথা সামগ্রিক ক্ষেত্রে উন্নীত করব। তাই আজও সম্পূর্ণতার লক্ষ্যে সচেষ্ট আছি।

    প্রসঙ্গত, ১৯৬৭ সাল। গ্রামের অধিপতি ঠাকুর কুমার সাহেবের নামানুসারেই এলাকার নাম হয়েছে কুমারপুর বা কুঙারপুর। আগে এই এলাকা জামিরাপাল গড়ের জমিদার বা মহাজনের অধীনস্থ ছিল। শোনা যায়, উক্ত জমিদার বংশের সুযোগ্য উত্তরসূরি ছিলেন ভূঁইয়া শ্রী রামচন্দ্র দাস মহাপাত্র। তাঁর পিতা শ্রী দ্বারিকানাথ দাস মহাপাত্রের স্মৃতিতে কুমার সাহেব থান সংলগ্ন জায়গা এলাকায় শিক্ষার প্রসারের জন্যদান করেন শ্রী রামচন্দ্র দাস মহাপাত্র। সেই জায়গা থেকেই কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তির আন্তরিক উদ্যোগ ও এলাকাবাসীর সক্রিয় সহায়তায় শুরু হয় দ্বারিকাপল্লি কেএস শিক্ষায়তনের পথ চলা। এই স্কুলকে কেন্দ্র করে গ্রামের মানুষ আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেন। তবে সেই সময় বিদ্যালয়ে পঠনপাঠন প্রক্রিয়া চালানোর জন্য ন্যূনতম শ্রেণিকক্ষ ছিল না। এছাড়া বিদ্যুৎ পরিষেবা না থাকায় গরমে পড়াশোনা করতে সমস্যায় পড়তে হতো পড়ুয়াদের। অপরদিকে স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য পরিস্রুত পানীয় জলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। স্কুলের উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত লম্বাটে একটি টিনের চাল সহ মাটির ঘর ছিল। যার কিছুটা ছাত্রাবাস ও রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহার করা হতো। একইসঙ্গে ছিল পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত চারটি কক্ষ যুক্ত একটি ভগ্নপ্রায় পাকা ঘর। তার মধ্যে তিনটি শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন ছবিটা বদলেছে। স্কুলের পড়ুয়ারা পাচ্ছে পরিস্রুত পর্যাপ্ত পানীয় জল।  স্কুলে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট ছাত্রাবাস নির্মিত হয়েছে। সূচনা লগ্নে এটি উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল। 

    ২০০৯ সাল থেকে মাধ্যমিক ও ২০১২ সাল থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পঠনপাঠন চালু হয়েছে। বর্তমানে প্রধান শিক্ষক সহ মোট শিক্ষাকর্মীর সংখ্যা ১৭। বর্তমানে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে ল্যাবরেটরি, বিশেষ পাঠদান কক্ষ, পাঠাগার, অত্যাধুনিক ব্যায়ামাগার, একাধিক স্বাস্থ্যসম্মত শৌচালয়, বিদ্যুৎ ছাড়াও আছে পাওয়ার ব্যাকআপের ব্যবস্থা। এছাড়াও এনসিসির অনুমোদন এই বিদ্যালয়ের প্রগতির পথ পরিক্রমাকে গৌরবময় করেছে।

    স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি তারাপদ পাত্র বলেন, বর্তমানে আমরা অনেক দিক থেকে সমৃদ্ধ। তবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বার্থে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর শূন্য পদগুলো পূরণ করলে অনেকটাই উপকার হবে। এছাড়া তোরণ সহ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ অত্যাবশ্যক।

    বিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমি কাউন্সিলের সম্পাদক জুঝার হাঁসদা বলেন,  বিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে আমরা দৃঢ় সংকল্প। তাই সংশ্লিষ্ট  সব বিভাগের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করি।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)