• বাংলায় প্লাবন নিয়ন্ত্রণে বলপাহাড়িতে ব্যারাজ
    এই সময় | ০৮ আগস্ট ২০২৪
  • বিশ্বদেব ভট্টাচার্য, আসানসোল

    বর্ষা এলেই বাংলার চোখে কার্যত ভিলেন হয়ে ওঠে মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার। দুই জলাধার থেকে জল ছাড়ার কারণে প্লাবিত হয় নিম্ন দামোদর অববাহিকার পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া। জল ছাড়া ও প্লাবন নিয়ে প্রতিবারই ডিভিসির দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, বাংলাকে না জানিয়ে জল ছাড়ায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় দক্ষিণবঙ্গে।একইসঙ্গে তাঁর অভিযোগ, দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় জল ধরে রাখতে অক্ষম দামোদর ও জলাধারগুলো। নদীতে পলি জমার ফল ভুগতে হচ্ছে বাংলাকে। এবার প্লাবনের হাত থেকে বাংলাকে বাঁচাতে ঝাড়খণ্ডের তেনুঘাট ও মাইথনের মাঝে আরও একটি জলাধার তৈরির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিভিসি। ড্যাম তৈরির ফিজ়িবিলিটি এবং ডিটেইলড প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের গুয়াহাটি শাখাকে।

    জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ঝাড়খণ্ডের গিরিডির কাছে বলপাহাড়ি এলাকায় বাঁধ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই বাঁধ তৈরি হলে তেনুঘাট থেকে ছাড়া জল ধরে রাখা সম্ভব হবে বলপাহাড়িতে। অর্থাৎ তেনুঘাটের জল তখন সরাসরি এসে পড়বে না পাঞ্চেতে, যার ছাড়া জলে ডুবে যায় রাজ্যের একাধিক জেলা। বলপাহাড়ি ড্যাম তেনুঘাটের উদ্বৃত্ত জল ধরে রাখতে সক্ষম হবে।

    সম্প্রতি দিল্লিতে দামোদর ভ্যালি রিভার রেগুলেটরি কমিটি (ডিভিআরআরসি) ও সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। তাতে উপস্থিত ছিলেন ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও ডিভিসির প্রতিনিধিরা। ডিভিআরআরসি-র মেম্বার সেক্রেটারি শশী রাকেশ ‘এই সময়’কে বলেন, ‘বৈঠকে বলপাহাড়ি ড্যাম তৈরির সিদ্ধান্ত প্রাথমিক ভাবে নেওয়া হয়েছে। তার ফিজ়িবিলিটি এবং ডিপিআর তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের গুয়াহাটি শাখার আধিকারিকদের।’

    গুয়াহাটির আধিকারিকদের কেন দেওয়া হলো এই দায়িত্ব? জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশে ড্যাম সংক্রান্ত বিষয়ে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে গুয়াহাটি শাখা। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডিভিসির কাছে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে তাদের।’ শশী রাকেশ জানিয়েছেন, দিল্লির ওই বৈঠকে বলপাহাড়ি ড্যাম নির্মাণে শর্ত সাপেক্ষে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বছরে একাধিকবার চাষের জন্য ডিভিসির জল চাইলে তারা পেয়ে থাকে।

    নতুন ড্যাম নির্মাণের পরেও যেন ওই সুবিধা বজায় থাকে। লিখিত ভাবে বিষয়টি প্রতিশ্রুতির আকারে রাখতে হবে। এছাড়া প্লাবন নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের যে শর্ত এখন রয়েছে তা যেন তখনও বজায় থাকে। অন্য দিকে, বৈঠকে ঝাড়খণ্ড সরকারের প্রতিনিধি আবেদনে জানিয়েছিলেন, ড্যাম তৈরিতে তাঁদের আপত্তি না থাকলেও সমস্যা দেখা দিতে পারে জমি নিয়ে। তাঁদের আবেদন ছিল, আগে বলপাহাড়িতে ব্যারাজ তৈরি করুক ডিভিসি। সেই ব্যারাজের সুবিধের কথা স্থানীয়দের বোঝানো গেলে ড্যামের জমি পেতে আর অসুবিধা হবে না।

    যদিও শশী রাকেশ বলেন, ‘বিষয়টি অবাস্তব বলে ঝাড়খণ্ডের ওই দাবি মানা হয়নি।’ কেন অবাস্তব? শশী রাকেশ জানান, কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করে ড্যাম তৈরির পরে যদি জমি না পাওয়া যায় তাহলে পুরো প্রকল্পটি মাঠে মারা যাবে।

    ডিভিসির এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর (সিভিল) আঞ্জনি কুমার দুবে বলেন, ‘দিল্লির ওই বৈঠকে আমাদের মাইথন ও পাঞ্চেতের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। বহু আগেই এই বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা ছিল ডিভিসি-র। তখন জমি বাদ দিয়ে ৬ হাজার কোটি টাকা প্রকল্প খরচ ধরা হয়েছিল। এখন সেটা অনেক বেড়ে যাবে। নতুন ডিপিআর পেলে বোঝা যাবে।’ যোগ করেন, ‘এই বাঁধ নির্মাণ হলে পশ্চিমবঙ্গে প্লাবন সমস্যার সুরাহার সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের মানুষও নতুন করে সেচের সুবিধা পাবেন।’
  • Link to this news (এই সময়)