• কাফেতে বিস্ফোরণ, জ্বলন্ত অবস্থায় রাস্তায় ছটফট রাঁধুনির
    বর্তমান | ০৮ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সকাল সাড়ে এগারোটা। বিকট শব্দে কেঁপে উঠল যোধপুর পার্ক। বিস্ফোরণের অভিঘাতে ২৪০ নম্বর বাড়ির নীচে তলায় থাকা কাফের শাটার ভেঙে ছিটকে চলে যায় উল্টোদিকের ফুটপাতে। এরপরই রোমহর্ষক দৃশ্যের সাক্ষী থাকল গোটা এলাকা। রাস্তায় বেরিয়ে, ‘বাঁচাও বাঁচাও’ আর্তনাদ! জ্বলন্ত অবস্থায় ফুটপাতে ছুটে বেড়াচ্ছেন এক যুবক। স্থানীয়রাই তাঁর গায়ে জল দিয়ে আগুন নেভান। 

    বুধবার লেক থানা এলাকার যোধপুর পার্কে চীনা খাবারের কাফেতে ভয়াবহ বিস্ফোরণটি ঘটে। পুলিস সূত্রে খবর, কাফের সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিক করার ফলেই এই দুর্ঘটনা। গুরুতর জখম হয়েছেন কাফের রাঁধুনি চন্দ্রকুমার গুরুং (২৬)। আদতে তিনি সিকিমের রঙ্গোলির বাসিন্দা। তবে কর্মসূত্রে চন্দ্র ওই কাফের পাশেই থাকতেন। এদিন সকালে তিনি কাফে খোলার জন্য আলো জ্বালান। ঠিক সেই মুহূর্তেই বিস্ফোরণ ঘটে। নিমেষে পুড়ে খাক হয়ে যায় গোটা কাফেটি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় লেক থানার পুলিস ও দমকলের দু’টি ইঞ্জিন। ঝলসে যাওয়া রাঁধুনিকে প্রায় অবচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর শরীরের ৮০ শতাংশ ঝলসে যাওয়ায় বাঙ্গুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। দমকল কর্মীরা প্রায় আধ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। 

    স্থানীয় সূত্রের দাবি, এলাকায় মোমো বিক্রির জন্য খ্যাতি রয়েছে এই কাফেটির। সেটির মালিক থাকেন বেলঘরিয়া। আদতে কাফেটি চালান রাঁধুনিই। বিস্ফোরণের পর গোটা এলাকায় রান্নার গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিস জানিয়েছে, কাফের রান্নাঘরে একটি সিলিন্ডার রয়েছে। সেটি থেকেই কোনওভাবে গ্যাস লিক করে। রাতভর গোটা কাফেতে তা ছড়িয়ে পড়ে। এদিন সকালে রাঁধুনি কাফের লাইট জ্বালাতে যান। তখনই বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংস্পর্শে বিস্ফোরণ ঘটে কাফেতে। ঘটনাস্থলে গিয়ে ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মৌসুমী দাস বলেন, বিস্ফোরণ হলেও রান্নাঘরে থাকা গ্যাসের সিলিন্ডারটি অক্ষত রয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের জেরে সেটি ফেটে গেলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বড় আকার ধারণ করতে পারত। 

    এলাকার বাসিন্দা বিপিন চন্দ বলেন, চন্দ্রকে আমরা ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় গোটা এলাকায় দৌড়ে বেড়াচ্ছিল ও। ওই দৃশ্য ভোলা যায় না! মোবাইল পাচ্ছিল না বলে আবার কাফের ভিতর ঢোকে। সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। তখনই আমরা জল দিয়ে আগুন নেভাই। স্থানীয়দের দাবি, ওই সময় এলাকা দিয়ে বহু মানুষ যাতায়াত করেন। কাছেই রয়েছে স্কুল। বিস্ফোরণের ঘটনায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। কীভাবে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিক করল? কতদিন সিলিন্ডারের পাইপ বদল হয়নি? উত্তর খুঁজছে লেক থানার পুলিস। ঘটনার পর ওই কাফের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে পাঠিয়েছেন তদন্তকারীরা। পুরসভা সূত্রে খবর, বাড়ির নীচের তলায় এভাবে কাফে চালানোর কোনও অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফায়ার লাইসেন্সও ছিল না।
  • Link to this news (বর্তমান)