নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: দেড় মাস বয়সে পোলিও আক্রান্ত হয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল ডান পা। হাজারো চিকিৎসা হয়। কিন্তু স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। তবে বড় হওয়ার পর হাল ছাড়েননি। পঙ্গু পা নিয়েই জলে ঝাঁপ। সাঁতারে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তারপর ক্রমে তৈরি করে ফেললেন একের পর এক রেকর্ড। প্রথম বাঙালি প্যারা সুইমার হিসেবে পার করলেন ইংলিশ চ্যানেল, নর্থ চ্যানেলের মত কঠিন জলপথ। এই সাঁতারু হাওড়ার সালকিয়ার বাসিন্দা। নাম রিমো সাহা। স্বাধীনতা দিবসে দিল্লির প্যারেডে অংশ নেওয়ার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। রিমোবাবুর আশা, তাঁর মতো পোলিও আক্রান্ত ছেলেমেয়েদের নিখরচায় সাঁতারের প্রশিক্ষণ দেবেন। তাঁর ছাত্র-ছাত্রীরা দেশকে পদক এনে দেবেন।
রিমোর ডান পা প্রায় ৮০ শতাংশ পঙ্গু। তাঁর বাবা শঙ্কর সাহা পেশায় নিরাপত্তারক্ষী। মা শুক্লাদেবী। মা চিকিৎসার জন্য ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, পুরোপুরি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়া আটকাতে সাঁতারই একমাত্র ভরসা। তখন থেকেই জলে জীবন খুঁজে পেয়েছিলেন রিমো। তারপর একদিন শুরু করলেন প্যারা অলিম্পিকের স্বপ্ন দেখা। ২০০৪ সালে প্রথম যোগ দিলেন। এবং দেশের জন্য পদকও আনলেন। তারপর ২০১০ সালে দিল্লিতে আয়োজিত প্যারা কমনওয়েলথ গেমসেও পেলেন সাফল্য। স্রেফ ইচ্ছাশক্তির উপর ভর করে শুরু করলেন একের পর এক চ্যানেলের প্রতিকূল স্রোত সাঁতরে পার হওয়ার প্রস্তুতি। ২০১৯ সালে ক্যাটলিনা চ্যানেল। ২০২২ সালে প্রথম বাঙালি প্যারা সুইমার হিসেবে নর্থ চ্যানেল। ২০২৩ সালে ইংলিশ চ্যানেল আপ ও ডাউন সাঁতার কাটার কঠিন চ্যালেঞ্জও পার করে ফেললেন। চলতি বছর মার্চ মাসে দক্ষিণ আটলান্টিকের রবিন আইল্যান্ড থেকে কেপটাউন গ্লোবার্গ পর্যন্ত একা সাঁতার কেটেছেন রিমো। গত কুড়ি বছর ধরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। জিতেছেন ৫২টি সোনা, ৩৮টি রুপো ও ১৭টি ব্রোঞ্জ মেডেল। রিমো পাঁচ পাঁচটি ন্যাশনাল রেকর্ড তৈরি করেছেন। আজ তাঁকে নিয়ে গর্ব করে গোটা বাংলা। গর্বিত দেশও।
এক সপ্তাহ আগে ভারত সরকারের সোশ্যাল জাস্টিস ও এমপাওয়ারমেন্ট ডিজাবিলিটি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের তরফে পেয়েছেন আমন্ত্রণ পত্র। দেশের রাষ্ট্রপতি তাঁকে স্বাধীনতা দিবসে দিল্লিতে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বর্তমানে রিমো আছেন পোল্যান্ডে। ফোনে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘সাঁতার আমার জীবন বদলে দিয়েছে। দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারছি, এটাই তো সব থেকে বড় প্রাপ্তি। রাষ্ট্রপতি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই আনন্দ বোঝানোর নয়। আমার মত অনেকে কম বয়সে হার স্বীকার করে নিচ্ছেন। হারলে চলবে না। আমি চাই, পোলিও আক্রান্ত ছেলে-মেয়েদের লড়াই করা শেখাতে। ওদের বিনামূল্যে সাঁতারের প্রশিক্ষণ দিতে চাই।’ রিমোর জীবনের লড়াইয়ে ছায়াসঙ্গী তাঁর স্ত্রী প্রিয়া দাস সাহা। প্রিয়াদেবীও সুইমার। সাঁতারে ডিপ্লোমা করছেন। তিনি চান, স্বামীর হাত ধরে বাংলা থেকে আরও অনেক প্যারা সুইমার উঠে আসুক।