• ‘বিতর্কিত’ বুদ্ধ থেকে ‘ভদ্রলোক’ মুখ্যমন্ত্রী, অমলিনই রয়ে গেল সেই সাদা ধুতি
    প্রতিদিন | ০৮ আগস্ট ২০২৪
  • রমেন দাস: ‘স্বর্গের নিচে মহাবিশৃঙ্খলা’ আজ! দীর্ঘ কয়েক দশকের রাজনৈতিক জীবন কাটিয়ে অমৃতলোকে পাড়ি দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharjee Demise) । নিজের হাতে থাকা লাল পতাকা বর্তমানের ‘ফেসবুকীয়’ সিপিএমকে তিনি দিয়ে গিয়েছেন কি দেননি, এ প্রশ্নের অবতারণা মুহুর্মুহু হলেও বঙ্গের ‘ব্র্যান্ড বুদ্ধ’ রেখে গিয়েছেন স্মৃতি। ইতিহাসের বালুচরে এঁকে দিয়েছেন একাধিক আঁচড়ের দাগ-ও!

    আসলে বুদ্ধবাবু মরেই যেন প্রমাণ করেছেন তিনি মরেননি! যুবসমাজ, এযুগের বাঙালির ‘ভাল মানুষ’ পর্বের ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে দিয়েছেন ভিন্ন ব্যক্তিত্ব! ক্ষমতায় থাকার সময়ে যে বুদ্ধদেব সমালোচনায় বিদ্ধ হতেন বারবার। সেই তিনিই হয়ে উঠেছেন বাংলার বর্তমান মসীহা! নেটাগরিকদের একাংশের কাছে সবচেয়ে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বহুল মুখ্যমন্ত্রীও! একমাথা সাদা চুল, ধবধবে সাদা ধুতি, ফতুয়ার কালো দাগহীন বিরাজে সেই বুদ্ধই যেন হয়ে উঠেছেন পূর্ণিমার বঙ্গ-চাঁদ! তাঁর না থাকায় একাধিক অভাব খুঁজে পেয়েছে জনতা। রাজ্যের সপ্তম মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোকে, অভাবে নুইয়ে পড়েছেন বহু।

    কিন্তু এই বুদ্ধদেব অর্থাৎ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাইপোকে নিয়ে বারবার তৈরি হয়েছে বিতর্ক। দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে শুরু করে মমতাময় (Mamata Banerjee) বিরোধিতা অস্ত্রে বারবার ফালাফালা হয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তাপসী  মালিক ধর্ষণ থেকে বারাসতের রাজীব দাস হত্যাকাণ্ড! রাজ্যের সমস্ত খারাপের নেপথ্যে বিদ্ধ হতে হয়েছে বুদ্ধদেবকে। বর্তমানের ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তি’র এই উৎকৃষ্ট উদাহরণই সেদিন হয়েছিলেন চুনকালিময় পাথর! কেন বলছি একথা?

    অনেকেই বলেন, জ্যোতি বসুর (Jyoti Basu) জীবনে ‘ঐতিহাসিক ভুল’ ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে (Budhhadev Bhattacharya) নিজের উত্তরসূরি হিসেবে বাছা! আবার কেউ কেউ দাবি করেন, প্রমোদ দাশগুপ্তের পছন্দের বুদ্ধ ‘অনিলায়নে’র ভাঙনে সক্রিয় ছিলেন বরাবর! তাই নাকি বামেদের অন্দরে খুব একটা পছন্দের পাত্র ছিলেন না সংস্কৃতিপ্রেমী বুদ্ধদেব। সত্যিই কি তাই?

    সাহিত্যচর্চা এবং রাজনীতির পরিসরের ভারসাম্য ততদিনে শিখে গিয়েছেন বুদ্ধ। জ্যোতি বসুদের ‘খাদ্য আন্দোলনে’র বহর ছাড়িয়ে পাকাপাকি রাজনীতিতে প্রবেশ ঘটেছে তাঁর। প্রেসিডেন্সি কলেজের (Presidency College) গন্ডি পেরিয়ে বুদ্ধের বিস্তার ঘটেছে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে। পূর্ববঙ্গের (Bangladesh) সন্তানের কলকাতা যাপনে ততদিনে সঙ্গী হয়েছেন কার্ল মার্ক্স (Karl Marx) । ১৯৬৬ নাগাদ সিপিএমের প্রাথমিক সদস্যপদ। তারপর ১৯৭৭ সাল, কাশিপুর বিধানসভা (Cossipore) কেন্দ্র থেকে নির্বাচন লড়লেন বুদ্ধদেব। সেই শুরু! একে একে সাধারণ বিধায়ক থেকে রাজ্যের মন্ত্রী। তীব্র কঠিন সিপিএম সংগঠনেও ফের প্রভাব বাড়তে শুরু করল তাঁর।

    এরপর রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী থেকে শুরু করে জ্যোতি বসুর মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রাজ্যের প্রথম উপমুখ্যমন্ত্রী। বারংবার প্রমোশন পেলেন প্রমোদ-প্রিয় বুদ্ধ। জ্যোতির হাত থেকে পতাকা গেল তাঁর হাতে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন বুদ্ধদেব। ‘বুদ্ধ পারবে, ও বদলে গিয়েছে অনেক!’ রাজনীতির প্রবীণ অলিন্দে কান পাতলে জ্যোতির মন্তব্যের পাহাড়ে টিম টিম করে আজও জ্বলে এই শব্দবন্ধ। অনেকেই বলেন, বুদ্ধ পেরেছেন, রাজ্যের ভোল বদলে সিদ্ধার্থশংকর রায়ের পর ছাপ রেখেছেন তিনি। কিন্তু বিতর্ক?
  • Link to this news (প্রতিদিন)