সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শেষবার দলীয় কর্মসূচিতে দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ভগ্ন শরীর নিয়েই কোনওক্রমে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড পর্যন্ত এসেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, খারাপ সময়ে যদি একবার মঞ্চে গিয়ে দলীয় কর্মীদের পাশে থাকার বার্তাটা দেওয়া যায়। নাহ, শেষপর্যন্ত পারেননি। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ব্রিগেডের মঞ্চে না উঠেই ফিরতে হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। কিন্তু, বুদ্ধবাবু ওই যে ১২ মিনিট ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ছিলেন, তাতেই হয়তো বহু বামপন্থী কর্মী হারানো আত্মবিশ্বাসের অনেকটা ফিরে পেয়েছিলেন। আসলে, আজও অনেক বামপন্থী বিশ্বাস করেন, সাদা চুলের ওই ভদ্রলোক যদি একবার সুস্থ হয়ে মাঠে নামতেন তাহলে হয়তো ভোটের হিসেবে শূন্য যাওয়া বামেরা আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারত।
সক্রিয় রাজনীতি থেকে অনেক দিন আগেই বিদায় নিয়েছেন বুদ্ধবাবু। ২০১১ সালে যাদবপুর কেন্দ্রে হারার পর থেকেই সেভাবে দলের সক্রিয় কোনও কর্মসূচিতে দেখা যায়নি তাঁকে। আসলে বুদ্ধবাবুর ফুসফুসের সমস্যা ছিল বহুদিনের। শেষ কয়েক বছর সিওপিডি-র সমস্যার জন্য বিমানে উঠতে পারতেন না। সেভাবে দলের মিটিং-মিছিল গুলিতেও যেতে পারতেন না ভগ্নস্বাস্থ্যের জন্য। প্রায় একযুগ সরাসরি দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যায়নি তাঁকে।
এর মধ্যে বাংলা থেকে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে বামেরা। কিন্তু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জনপ্রিয়তা কি আদৌ কমেছে? হয়তো না। সেজন্যই তো এতদিন পরে এসেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বই কলকাতা বইমেলায় ‘বেস্ট সেলার’তকমা পায়। আজও সোশ্যাল মিডিয়ায় বামপন্থীদের দেখা যায় বুদ্ধবাবুকে নিয়ে লেখালিখি করতে। রাজ্য যখনই কোনও ‘অনাচার’, ‘অনিয়ম’ হয়েছে, তখনই বামপন্থীরা তাঁর উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ‘কই বুদ্ধবাবুর আমলে তো এমনটা হতো না।’ আজ যখন গোটা দেশে সাম্প্রদায়িক অশান্তির আবহ, বাংলার বুকেও যখন সাম্প্রদায়িক অকল্পনীয় হানাহানির ঘটনা চোখে পড়েছে, তখনও সেই বুদ্ধকেই আদর্শ করে বামপন্থীরা বলেন, “এমন একজন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়োজন যিনি বলতে পারেন, দাঙ্গা করতে এলে মেরে মাথা ভেঙে দেব।”
সেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আর নেই। বৃহস্পতিবার বামপন্থীদের ‘অনাথ’ করে দিয়ে ‘মার্কস’লোকে পাড়ি দিয়েছেন তিনি। খবর ছড়াতেই বাংলার রাজনীতি সচেতন মানুষের মধ্যে আর্তনাদ শুরু হয়েছে। আর বামপন্থীরা শুরু করেছেন হা হুতাশ। যা প্রত্যাশিতই ছিল। আসলে এই হা হুতাশ শুধু বুদ্ধবাবুকে হারানোর হা-হুতাশ নয়। এ হা-হুতাশ বঙ্গ বামপন্থীদের ‘শেষ আইকন’কে হারানোর হা-হুতাশ। বুদ্ধবাবুর পরে আর কাকেই বা আদর্শ হিসাবে তুলে ধরবে বামেরা? বেঁচে থাকলে বুদ্ধবাবুও হয়তো চাইতেন নিমেষে আরও একবার রাজনীতির ময়দানে নেমে লালঝান্ডার এই আর্তনাদ মিটিয়ে দিতে। কিন্তু চাইলেও আর তাঁর পক্ষে সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরা সম্ভব নয়। তবু, বাংলার শূন্য হয়ে যাওয়া বামপন্থীরা আজও ভরসা করেন ওই পক্ককেশ ভদ্রলোককেই। তাদের কাতর আর্তি, ‘ফিরে আসুন বুদ্ধবাবু’।