অশান্ত বাংলাদেশ, সিএএ নিয়ে অস্ত্রে শান বিজেপির, কটাক্ষ তৃণমূলের
এই সময় | ০৮ আগস্ট ২০২৪
মণিপুস্পক সেনগুপ্ত
বাংলাদেশের এখনকার অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে সেখানকার সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের অভিযোগগুলোকে হাতিয়ার করে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে কোমর বেঁধে প্রচারে নামছে বিজেপি। সিএএ কার্যকর করা কতটা প্রয়োজন ছিল, সেই প্রচারে জোর দিচ্ছে তারা। বিজেপি যে পড়শি দেশের সংখ্যালঘুদের পাশে, এই বার্তা দিতে গত কয়েক দিন ধরেই তৎপর বঙ্গ-বিজেপির নেতারা।শুভেন্দু অধিকারী যেমন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার আশ্বাস চেয়ে অনুরোধ করেছেন, তেমনই শমীক ভট্টাচার্য বাংলাদেশ প্রসঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সিএএ-র উপযোগিতার কথা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, ও পার বাংলার এখনকার অবস্থাকে হাতিয়ার করে বিজেপি এই ভাবে এ পার বাংলায় নতুন ভাবে মেরুকরণ-অস্ত্রে শান দেওয়ার কৌশল নিয়েছে।
বুধবার সংসদ ভবনের বাইরে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘ও পার বাংলায় যে সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁরা আমাদের রক্ত, আমাদের ভাই। আমরা এখানে মুখ বুজে বসে থাকতে পারি না। তাঁদের দিকটা আমাদের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করতে হবে। যাঁরা ক্যা-ক্যা, ছি-ছি করতেন, এ বার তাঁদের বোঝা উচিত, সিএএ কেন করা হয়েছে।’
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও বুধবার বলেন, ‘বাংলাদেশের ঘটনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, সিএএ কেন দরকার। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার অত্যন্ত দূরদৃষ্টির পরিচয় দিয়েছে।’ এ দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দাবিতে যাদবপুরে এইট-বি বাসস্ট্যান্ডের কাছে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মীরা।
এ বারের লোকসভা ভোটে এ পার বাংলার সংখ্যালঘু ভোটারদের একটা বড় অংশই তৃণমূলকে সমর্থন জানিয়েছেন। বিজেপি সূত্রের খবর, দলের অন্দরে শুভেন্দু অধিকারীর মতো বিজেপি নেতাদের যুক্তি, সংখ্যাগুরুদের আর তিন-চার শতাংশ ভোট নিজেদের দিকেই টানতে পারলেই তৃণমূলকে পরাস্ত করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে আরও বেশি করে মেরুকরণের পথে হাঁটতে চাইছে পদ্ম শিবিরের একাংশ।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিজেপির এই মেরুকরণ-কৌশলে অনুঘটকের কাজ করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক শিবিরের অনেকেই। বঙ্গ-বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘আমরা বারবার দেখছি, বাংলাদেশে কোনও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হলে ওই দেশের সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হয়। এ বারও তাই হচ্ছে। আমরা সতর্ক আছি। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।’
মঙ্গলবার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দিল্লিতে গিয়ে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে। বৈঠক শেষে শুভেন্দু বলেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে।’
যদিও বঙ্গ-বিজেপির এই তৎপরতা উস্কানিকমূলক বলেই মনে করছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের এক নেতার বক্তব্য, ‘অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমরা নাক গলাতে চাই না। বিজেপি অর্ধসত্য প্রচার করছে। বাংলাদেশের বহু জায়গায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিচ্ছে সংখ্যাগুরুরাই। অথচ বিজেপি নেতাদের মুখে সেটা শোনা যাচ্ছে না।’