কেন পাম অ্যাভিনিউয়ের ২ কামরার ফ্ল্যাট ছাড়তে চাননি বুদ্ধদেব?
এই সময় | ০৮ আগস্ট ২০২৪
'ওই ঘরে থাকাটাও আমার একটা স্বাধীনতা'
পাম অ্যাভিনিউয়ের সরকারি আবাসনের দু'কামরার ফ্ল্যাটে থাকতেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য। তাঁর কামরাজুড়ে বই, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি, ছিল চে গেভারার একটি ফ্রেমও। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রাজনৈতিক জীবন অতি দীর্ঘ। ছাত্র রাজনীতি দিয়ে শুরু, দীর্ঘ পথ পেরিয়ে তিনি পৌঁছেছিলেন রাইটার্স বিল্ডিংয়ে।কিন্তু, তাঁর ঠিকানা বদলায়নি। কেন ওই ফ্ল্যাটের প্রতি তাঁর এত টান? একটি সাক্ষাৎকারে এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তিনি বলেছিলেন, 'কলেজে যে ধরনের পোশাক পরতাম, যা খেতাম, যে ভাবে আড্ডা দিতাম, এখনও তাই করি। এটাই আমার সামাজিক স্তর। বড় কোনও সাজানো গোছানো ঘরে গেলে আমার একটা অস্বস্তি হবে।'
তিনি যে স্বাধীনতাপ্রেমী, তা জানিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আর পাম অ্যাভিনিউয়ের ২ কামরার ফ্ল্যাটে থাকাটা তাঁর স্বাধীনতা, জানান বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বর্গফুটের নিরিখে তাঁর ফ্ল্যাট ছোট হলেও সেখানে তাঁর কাজের কোনও অসুবিধা হত না বলেও জানিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। নিজের এই সিদ্ধান্তে পরিবারকে পাশে পেয়েছেন সবসময়। সন্তান সুচেতন বরাবর বাবাকে বলে এসেছেন যেন ওই বাড়ি ছেড়ে তিনি না যান।
বামফ্রন্ট সরকারের আবাসনমন্ত্রী ছিলেন গৌতম দেব। তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে বলেছিলেন ওই ফ্ল্যাট ছেড়ে গড়িয়াহাটে আবাসন দফতরের বড় বাড়িতে থাকতে। কিন্তু, রাজি হননি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। একবার আবাসনের দেওয়াল থেকে একটি বটগাছের শিকড় ঢুকে পড়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাম অ্যাভিনিউয়ের সরকারি আবাসনের ফ্ল্যাটের বাথরুমে। কলকাতার তৎকালীন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের কানে সেকথা যাওয়া মাত্রই তিনি তা সংস্কারের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু, পুরো আবাসনটি সংস্কার করা হয়নি। ২০১৮ সালে বিষয়টি নজর আসার পর ওই আবাসনটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত কয়েকবছর অসুস্থতার কারণে বাড়ি ছেড়ে সেভাবে বার হননি তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই।