• 'আমরা ২৩৫ ওরা ৩০,' বুকে লাল পতাকা, আজীবন সৎ বুদ্ধবাবু রেখে গেলেন শূন্য সিপিএমকে
    হিন্দুস্তান টাইমস | ০৮ আগস্ট ২০২৪
  • বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রয়াত। একটা যুগের অবসান। নিপাট ভদ্র মানুষ। ১০০ শতাংশ বাঙালিয়ানা। সাদা ধুতি পাঞ্জাবি। সহজ সরল জীবন। জ্যোতি বসুর পরবর্তী পর্যায়ে এক অন্যরকম মুখ্য়মন্ত্রী দেখেছিল বাংলা। যিনি আবেগপ্রবণ। যিনি কথায় কথায় সংস্কৃতির কথা বলতেন। নন্দনে যেতেন। পাম অ্যাভিনিউয়ের ছোট্ট ফ্ল্যাটে থাকতেন। অনাড়ম্বরহীন জীবন। আলোকময় একটা জীবন। সেখানে বাহুল্যতা নেই। আছে একরাশ আবেগ। আর খাদহীন সততা। 

    কিন্তু ২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের পরে সেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখে একটা লাইন শুনে চমকে গেল গোটা বাংলা। তবে কি কোথাও অহঙ্কার দানা বাঁধছিল? কোথাও কি বিরোধীদের অস্বীকার করার একটা প্রবনতা ক্রমশ গ্রাস করতে শুরু করেছিল? 

    'আমরা ২৩৫, ওরা ৩০। ' চমকে উঠেছিল গোটা বাংলা। বলা ভালো তৎকালীন লাল বাংলা। ক্ষমতার একেবারে চূড়ায় বসে রয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রাইটার্স থেকে বেরিয়ে নন্দনের সামনে এসে দাঁড়ায় তাঁর সাদা অ্যাম্বাসাডর। গোটা বাংলা দেখল ধবধবে সাদা ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত এক সংস্কৃতিবান মুখ্য়মন্ত্রীকে। 

    জ্যোতি বসুর মতো অতটা রাশভারী হয়তো নন। তবে পড়াশোনা নিয়ে থাকেন সবসময়। পার্টির নীচুতলার কর্মীরাও পড়াশোনা জানা সংস্কৃতিবান মানুষ হিসাবেই চিনতেন বুদ্ধদেবকে। বেশ আবেগপ্রবণ মানুষ। কিন্তু প্রবল ক্ষমতার জেরে কোথাও কি পার্টির মধ্য়ে দম্ভের ঘুনপোকা বাসা বেঁধেছিল? আজ দুঃখের দিন তা নিয়ে কাটাছেঁড়া করাটা হয়তো সমীচিন নয়। তবুও ঘুরে ফিরে আসে সেই একটাই কথা, আমরা ২৩৫ ওরা ৩০। 

    ২০০৬ সালে বিপুল জনাদেশ পেয়ে জেতার পরে শোনা গিয়েছিল সেই বার্তা, আমরা ২৩৫ ওরা ৩০। কী করবে ওরা? দম্ভ, আত্মতুষ্টি সব কিছু যেন মিশে ছিল সেই কথার মধ্য়ে। ঠিক ছিল কি ভুল ছিল তা নিয়ে নানা তর্ক হয়েছে বাংলার রাজনীতিতে। বিরোধীদের তাচ্ছিল্য করার প্রবণতা? 

    বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দেহ যখন আজ কলকাতার রাজপথে যাচ্ছে শববাহী শকটে তখন রাজ্য বিধানসভায় শূন্য সিপিএম। মার্কেজের ভক্ত ছিলেন বুদ্ধদেব। সেই বুদ্ধদেবই যখন ২৩৫ আসন নিয়ে জিতেছিলেন পশ্চিমবঙ্গে তখন একবার বিরোধীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, 'আমরা ২৩৫ ওরা ৩০। '

    গোটা বাংলায় ঝড় তুলেছিল এই কথা। নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল সিপিএমকে। ঘরে বাইরে সমালোচনা। সেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলেই বাংলা থেকে বিদায় নিয়েছে সিপিএম। তবে অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করেননি তিনি। সেই সঙ্গে, বাংলার উন্নয়ন যেখানে হবে বলে মনে করেছিলেন সেই প্রকল্প থেকে সরে আসতে চাননি। তা সিঙ্গুরও হোক কিংবা নন্দীগ্রাম। রাজনীতির চোরাগলি কি ঠিকঠাক চিনতেন না আজীবন সৎ থাকা , আজীবন মাথা উঁচু করে থাকা বুদ্ধবাবু? জবাবটা আজও খোঁজে বাংলা।
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)