• শ্রান্ত পথিকের থামল লড়াই, স্মরণে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
    হিন্দুস্তান টাইমস | ০৮ আগস্ট ২০২৪
  • প্রয়াত পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে কলকাতার পাম অ্যাভিনিউর বাড়িতে মৃত্যু হয় তাঁর।

    ১৯৪৪ সালের ১ মার্চ উত্তর কলকাতায় জন্ম বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। বাবা নেপালচন্দ্র ভট্টাচার্য সারস্বত লাইব্রেরি নামে একটি সনাতনী প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এহেন বাড়ির ছেলে বুদ্ধদেব ১৯৬১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হয়ে দীক্ষিত হলেন বামপন্থার মন্ত্রে। বাংলায় বামপন্থার উত্থানলগ্নে মুজাফ্ফর আহমেদ, প্রমোদ দাশগুপ্তের মতো নেতাদের কাছ থেকে শিখলেন রাজনীতির পাঠ। ১৯৬৪ সালে বাংলায় স্নাতক হয়ে রাজনীতির ময়দানেই জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলেন বুদ্ধদেব। ১৯৬৬ সালে সিপিআইএমে যোগদান করেন তিনি। একে একে সিপিএমের রাজ্য কমিটি পেরিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হলেন। 

    ১৯৭৭ সালে কাশীপুর থেকে প্রথমবার বিধায়ক হন তিনি। প্রথম বাম সরকারে দায়িত্ব পান তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের। এর পর দীর্ঘদিন ওই দফতরের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ২০০০ সালে জ্যোতি বসু অবসর নিলে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেন বুদ্ধবাবু। ২০১১ সাল পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর পদে ছিলেন তিনি। তবে তাঁর মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকার কাল ছিল কণ্টকাকীর্ণ। ২০০৬ সাল থেকে একের পর এক জমি আন্দোলনে বার বার সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। সিঙুরে টাটা মোটরসের কারখানা তৈরির প্রকল্প বুমেরাং হয় তাঁর জন্য। যার জেরে রাজ্যে বিপুল উত্থান হয় তৃণমূল কংগ্রেসের। সেই আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থতার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।বামপন্থীদের মধ্যে সংস্কারপন্থী ছিলেন বুদ্ধবাবু। আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণের পক্ষে ছিলেন তিনি। সঙ্গে দলের অন্দরে যে দুর্নীতি প্রবেশ করেছিল তার বিরুদ্ধেও সব সময় মুখর ছিলেন তিনি। যা নিয়ে দলের একাংশের সঙ্গে রীতিমতো লড়াই চলত তাঁর। 

    ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পর রাজনীতি থেকে ক্রমশ দূরে সরে যেতে থাকেন তিনি। এর পরই তাঁর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বাড়তে থাকে। যার জেরে দলের পলিটব্যুরো থেকে অব্যহতি নেন তিনি। তবে পাম অ্যাভিনিউর ২ কামরার ফ্ল্যাট তিনি ছাড়েননি কোনও দিন। এমনকী হাসপাতালে ভর্তি হতেও চরম অনীহা ছিল তাঁর। 

    রাজনীতিবিদের বাইরে বুদ্ধদেব বাবু ছিলেন একজন আদ্যন্ত সাহিত্যিক ও সাহিত্য অনুরাগী। কাকা সুকান্ত ভট্টাচার্যের মতো তাঁর জীবনেও ছিল রবীন্দ্রনাথের গভীর প্রভাব। সমসাময়িক কবি - সাহিত্যিকদের অনেকেই ছিলেন তাঁর বন্ধুপ্রতীম। ফ্যাসিবাদ নিয়ে তাঁর গবেষণা ও লেখা বাংলা ভাষার অন্যতম সম্পদ। বাংলা সাহিত্য ছাড়াও চলচ্চিত্রে বিশেষ উৎসাহ ছিল তাঁর। ফরাসি চলচ্চিত্র পরিচালক জাঁ লুক গোদারের বিশেষ ভক্ত ছিলেন বুদ্ধবাবু। যে রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনের অন্যতম দিশারী ছিলেন, তাঁর প্রয়াণ দিবসের পরদিনই চলে গেলেন বুদ্ধদেবও। তিনি রেখে গেলেন স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য ও একমাত্র সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্যকে।
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)