• বুদ্ধবাবুর সঙ্গে সিনেমা দেখতে গেছিলামঃসৌগত! দাদা চলে গেল,কেঁদে ফেললেন শ্রীকুমার!
    হিন্দুস্তান টাইমস | ০৮ আগস্ট ২০২৪
  • ৮০ বছর বয়সে জীবনাবসান হল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। দীর্ঘদিনই অসুস্থ ছিলেন তিনি। একাধিকবার তাঁকে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ভর্তি হতে হয়েছে আলিপুরের ধারে বেসরকারি হাসপাতালে। বারবারই সুস্থ হয়ে ফিরেছিলেন, শেষ কয়েকবছর যাবৎ বামেদের ডাকা ব্রিগেডে আসতে পারতেন না কিন্তু মন পড়ে থাকত মঞ্চের দিকেই। তাই অডিও বার্তা পাঠিয়েই বাম কর্মী সমর্থকদের উজ্জিবীত করতেন। এক সময় আলিমুদ্দিনের যারা অবাধ বিতরণ, শেষ এক দশক অসুস্থতার কারণে সেভাবে যেতেই পারেননি। পাম অ্যাভিনিউয়ের এক তোলার ঘরের বইগুলো থাকবে, থাকবে না শুরু বই পড়ার মানুষটা। রাজনৈতিক জীবনে হাজারো আকচাআকচি থাকলেও তাঁর বিদায় বেলায় মিলে গেল গোটা বাংলা। রাজনীতিবিদ থেকে অভিনেতা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বিদায়গ্নে আবেগপ্রবণ সকলেই। 

    তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়- বুদ্ধদেব বাবুর সঙ্গে আমার মাঝেমাঝেই তর্ক হত। আমি একদলকে নিয়ে বলেছিলাম নিহত গোলাম, উনি বলতেন না ওরা বিষাক্ত ধুতুরা ফুল। আমি টানা ২২ বছর ওনার সঙ্গে বিধানসভায় ছিলাম, খুব ভালো ডিবেটার ছিলেন, অনেক বিষয় নিয়ে আমাদের তর্ক হত। কিন্তু সকল রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং বিরোধীদের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক রাখতেন। তবে পার্টির বাইরে উনি যেতেন না। আমি শিবপুর, গড়বেতা, কেশপুর নিয়ে আলোচনা করেছিলাম, কিন্তু উনি বলেছিলেন পার্টি না চাইলে তিনি করবেন না। আমার মনে হয়, পার্টির প্রতি উনি জ্যোতি বসুর থেকেও বেশি কমিটেড ছিলেন। একবার আমি একটা সিনেমা দেখতে চেয়েছিলাম, উনি আমার জন্য নন্দনে আলাদা স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করলেন। সেখানে আমি আমার এক বন্ধুকে নিয়ে যাই, উনিও ওনার এক বন্ধুকে নিয়ে আসেন, একসঙ্গে সিনেমা দেখি। ভালো সিনেমা দেখতে চাইলে বা আলোচনা করলে ও সেখানে বেশ ভালো আলোচনা করত।

    বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামী- বুদ্ধদেববাবুর প্রয়াণ গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক কর্মীদের জীবনে এটা একটা দুঃখজনক ঘটনা। তাঁর মতে এমন সজ্জন ভদ্রলোক, দেখা যায় না। ১৯৯৬ সালে আমার সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁর সঙ্গে কাজ করার, তাঁকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পেয়েছিলাম। তাঁর বিরোধী দলের প্রতি ব্যবহার এবং আচরণ আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রীয়রঞ্জন দাশমুন্সির সঙ্গে কাজ করার সুবাদে ওনাকে অনেক কাছ থেকে দেখেছি, সেই সময় নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে উনি অনেক ছাত্রদের কাছে অনুপ্রেরণা ছিলেন।

    প্রাক্তন মন্ত্রী শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়-আমার তো নিজের দাদা, ভাই, বোন কেউ নেই। উনিই আমার দাদা ছিলেন, খবর পেয়েছি। আমি এই বেরোচ্ছি উত্তরবঙ্গ থেকে। আমার মনে হচ্ছে আমার অগ্রজ চলে গেল। কাজ করতে গিয়ে অনেক বকাও খেয়েছি, আবার ভালোবাসাও পেয়েছি। কাজের প্রতি সব সময় ভরসা রাখত আমাদের ওপর। সময়ের থেকে ১ মিনিট আগে কাজ করতে হবে, ১ মিনিট পরে করলে হবে না। আমি আমার মেয়ের বিয়ের কার্ড দিতে গেছিলাম, উনি জিঞ্জাসা করেছিল কবে বিয়ে। বললাম , তারপর উনি বৌদিকে নিয়েই এসেছিলেন। এরপর একদিন রেল অ্যাকসিডেন্টের সময় নিজেই আমার বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ফোন করে বললেন টিভি দেখেছ? আমি বললাম দেখা হয়নি, তখন বলল তারাতারি দেখ। এরপর আমায় বলেছিল দুর্ঘটনার স্থলে যেতে। আরও অনেকে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু আমায় যেহেতু প্রথমে বলেছিল তাই আমাকেই টিম ঠিক করে যেতে বলেছিল। আবার উপরাষ্ট্রপতি একবার রাজ্যে এসেছিলেন, আমি ঠিক সময় পৌঁছাতে পারিনি বলে বকেও ছিলেন। বলেছিলেন আরও আগে যাওয়া উচিত ছিল। উনি চলে যাওয়ায় অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল।

    পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়- ব্যক্তিগতভাবে ওনার সঙ্গে আলাপের সুযোগ হয়নি। তবে আমাদের সকলের রোল মডেন। বাঙালি হিসেবে অবশ্যই মর্মাহত উনি চলে যাওয়ায়। পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ রচনা করতে চেয়েছিলেন, সেটা হয়নি হয়ত। তবে ওনার স্বপ্ন আগামী প্রজন্ম এগিয়ে নিয়ে যাবে। বুদ্ধবাবুর জীবনযাত্রাই প্রমাণ করে দেয় একজম কমিউনিস্টের কেমন হওয়া উচিত। শুধু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নন একজন ভালো মানুষ হিসেবে, সংস্কৃতিবান মানুষ হিসেবেই, বামপন্থী ভাবধারার মানুষ হিসেবে উনি বাঙালির আইকন।
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)