WB06 0002। সাদা রঙের অ্যাম্বাসাডর। তবে এটি আর পাঁচটা সাধারণ গাড়ির থেকে অনেকটাই আলাদা। কারণ এতে চড়তেন স্বয়ং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার তাঁর প্রয়াণে চিরতরে 'জগদ্দল'-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হলো প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। রয়ে গেলেন বুদ্ধদেবের ২৮ বছরের সারথী মহম্মদ ওসমান।ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত। সেভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। কিন্তু, 'প্রিয় বুদ্ধদার' প্রয়াণের দুঃসংবাদ শুনে এন্টালি থেকে ছুটে চলে আসেন পাম অ্যাভিনিউতে। মন ভারাক্রান্ত মহম্মদ ওসমানের। শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। ছেলে বলেন, 'শারীরিক অসুস্থতার কারণে বাবা সেভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। কিন্তু, আজ বললেন তিনি জেঠুকে দেখতে যাবেনই। বাবা সবসময় বলতেন জেঠুর অসম্মান হয় এমন কোনও কাজ করবেন না কখনও। জেঠুও বলতেন, সাদা কাপড়ে যেন কোনও দাগ না লাগে। আমরা আজীবন সে চেষ্টা করে যাব।'
শুধু চালক আর সওয়ারি নয়, বুদ্ধদেবের সঙ্গে ওসমানের একটি পারস্পরিক শ্রদ্ধা-স্নেহের বন্ধন তৈরি হয়েছিল। শারীরিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তাই পদ্মপুকুর থেকে পাম অ্যাভিনিউ পর্যন্ত হেঁটেই পৌঁছে যান মহম্মদ ওসমান। বারবার বলছিলেন সাদা ধুতির বুদ্ধদেবের সততার কথা।
১৯৮২ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর গাড়িচালক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন মহম্মদ ওসমান। সেই থেকে শুরু। বাম আমলে CPIM-এর রাজ্য দপ্তরে গাড়িচালক হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৬ সালে সরকারি কর্মী পদে অবসর নেন তিনি। তার মধ্যে ২০১১ সালে পরাজয়ে বুদ্ধবাবু মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পর তাঁর সঙ্গে আর নিয়মিত সাক্ষাৎ হতো না ওসমানের। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে পথেঘাটে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গী ছিলেন তিনি। শোকার্ত কণ্ঠে ওসমান বলেন, 'ভদ্রলোক ছিলেন বুদ্ধদা। আমাকে আপনি ছাড়া সম্বোধন করতেন না।'
ওসমানের ছেলে বলেন, 'বাবাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন বুদ্ধ জেঠু। একবার চলচ্চিত্র উৎসবে শত্রুঘ্ন সিনহা তাঁর কাছে একটি আর্জি করেছিলেন। বুদ্ধ জেঠু বলেছিলেন, ওসমান ছাড়া বাকি যা কিছু চাওয়ার চেয়ে নাও। ওকে দেব না। আসলে উনি বুঝে গিয়েছিলেন বাবাকে পছন্দ হয়েছে শত্রুঘ্ন সিনহার।'
মহম্মদ ওসমান কখনও এক মিনিটও লেট করেননি। তাই তিনি অল্পদিনের মধ্যেই হয়ে উঠেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্নেহভাজন। গাড়িটিও ছিল তাঁর বড্ড প্রিয়। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেবের সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলেন তিনি। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রী না থাকলেও তাঁর শেষবারের ব্রিগেড যাত্রা এবং হাসপাতালেও এই গাড়িতেই যেতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এ দিন শেষযাত্রাতেও তাই শববাহী সকটের পিছন পিছন যেতে দেখা গেল সেই চেনা সাদা অ্যাম্বাসাডরকে।