• গাড়ি থেকে ইস্পাত, ভেঙেছে বুদ্ধদেবের শিল্পায়নের স্বপ্ন, ফিরে দেখা শালবনি টু সিঙ্গুর
    এই সময় | ০৯ আগস্ট ২০২৪
  • মুখ্যমন্ত্রী পদে এসেই রাজ্যে শিল্পের জোয়ারের ডাক দিয়েছিলেন। দলের অন্দরে-বাইরে সমালোচনা প্রশংসা দুই কুড়িয়েছেন। তবুও নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেননি। কৃষি থেকে শিল্প সবক্ষেত্রেই বিপ্লব আনতে চেয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর হাত ধরেই বাংলায় এসেছিল টাটা গোষ্ঠী।সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ির কারখানা করতে চেয়ে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। এরপরেই রাজনৈতিক জীবনে নাটকীয় মোড় বুদ্ধদেবের। সিঙ্গুরে কৃষকদের জমি অধিগ্রহণ করে টাটাদের ন্যানো গাড়ির কারখানা স্থাপনের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামেন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই তুমুল আন্দোলনের জেরে পিছু হঠতে হয় বামফ্রন্ট সরকারকে।

    বাম আমলে সিঙ্গুর, শালবনির সমসাময়িক সময়েই পুরুলিয়ায় রঘুনাথপুরে শুরু হয়েছিল শিল্প গড়ার প্রক্রিয়া। রঘুনাথপুর ১ ও নিতুড়িয়া ব্লক জুড়ে শুরু হয়েছিল ভারী শিল্প গড়ার কর্মকাণ্ড। ২০০৭-২০০৮ সালে এই দুই ব্লকের সীমানায় এক দিকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিভিসি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প শুরু করে। অন্যদিকে রঘুনাথপুর ১ নম্বর ও ২ নম্বর ব্লকের একাংশে ইস্পাত, সিমেন্ট, ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরিতে এগিয়ে এসেছিল তিনটি বেসরকারি শিল্পগোষ্ঠী। রঘুনাথপুর ১ ব্লকের নতুনডি পঞ্চায়েত এলাকায় রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ করে দিয়েছিল জয় বালাজি গোষ্ঠী ও শ্যাম স্টিলকে। দুই প্রকল্পেরই শিলান্যাস করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আধুনিক গোষ্ঠীকে রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মঙ্গলদা-মৌতোড় পঞ্চায়েত এলাকায় কারখানা গড়তে জমি দেওয়া হয়েছিল। তবে আসানসোল শিল্পাঞ্চলের কাছে থাকা রঘুনাথপুরে শিল্পায়নের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত নানা জটিলতায় বাস্তবায়িত হয়নি।

    অন্যদিকে, শালবনিতে ২০০৭ সালে জিন্দালদের ইস্পাত কারখানার জন্য প্রায় সাড়ে চার হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার। কিন্তু ইস্পাত কারখানা সেখানে নানান কারণে আর তৈরি হয়নি। প্রায় এক দশকের পর ২০১৬ সালে ওই জমির একাংশে সিমেন্ট কারখানা গড়ে ওঠে। কিন্তু ইস্পাত শিল্প আজও অধরা।

    বাংলার রাজনীতিতে বুদ্ধদেবের ১১ বছরের শাসনকালের শেষ পাঁচ বছর রাজনৈতিক দিক থেকে ছিল সরগরম। এই সময় রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল বুদ্ধদেবের শিল্পায়ন-নীতিকে ঘিরে। বুদ্ধেদেবের রাজনৈতিক জীবন আন্দোলিত হয়েছিল শিল্পায়নকে ঘিরেই। যে শিল্পায়নকে বাজি ধরে জনসমক্ষে এগিয়ে গিয়েছিলেন বুদ্ধদেব সেই শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের পদ্ধতিই বুদ্ধদেবের পায়ের তলার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। ২০০৬ সালে ২৩৫ আসনে জিতে ক্ষমতায় ফেরা মুখ্যমন্ত্রীকে পাঁচ বছর পরই শোচনীয় পরাজয়ের মুখে পড়তে হয়। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে সাড়ে ৩৪ বছরের বাম জমানার অবসান হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি দখল করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
  • Link to this news (এই সময়)