অভিষেক চৌধুরী, কালনা: মোবাইল চোর সন্দেহে এক যুবককে গণধোলাই দেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে ইলেকট্রিক শক দেওয়ার অভিযোগ উঠল স্থানীয়দের বিরুদ্ধে। গুরুতর জখম অবস্থায় যুবককে কালনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে মাথা ফেটেছে মায়েরও। বৃহস্পতিবার ভোররাতে কালনার মহিষমর্দিনীতলা এলাকার ঘটনা। আক্রান্ত যুবকের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েকজনকে আটক করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আহত যুবকের নাম শ্যামল পাসোয়ান। তিনি কালনা শহরের বকুলতলার বাসিন্দা। ঘটনার দিন বুধবার রাতে বাড়িতে মায়ের সঙ্গে ঝামেলা হওয়ায় স্থানীয় মহিষমর্দিনীতলা লাগোয়া মাঠে গিয়ে বসে ছিলেন। কালনা শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে আর কয়েকদিন পরেই মহিষমর্দিনী পুজো রয়েছে। সেই উপলক্ষে সেজে উঠছে এলাকা। মেলা বসার পাশাপাশি নাগরদোলাও বসেছে ওই এলাকায়। গত দুুই দিন ধরে এলাকায় কাজ করতে আসা শ্রমিকদের মোবাইল চুরি হয় বলে অভিযোগ। ওই রাতে শ্যামলকে বসে থাকতে দেখে অভিযুক্তদের সন্দেহ হয় তিনিই মোবাইল চুরি করেছে। এবং আবারও চুরি করতে এসেছে। এই সন্দেহের বশেই যুবককে ঘিরে নাগরদোলা বসানোর লোহার পিলারে বেঁধে লাঠি, রড, লোহার পাইপ দিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
মারধররের ফলে যুবকের নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরতে থাকলেও তাঁকে ইলেকট্রিক শক দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। শ্যামলের হাতে, পিঠে, বুকে, মাথায় গুরুতর চোট লাগে। গণধোলাইয়ে নাগরদোলা বসানোর লোকজনের সঙ্গে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দাও যোগ দেয় বলে অভিযোগ।
শ্যামলের মা শ্যামলী পাসোয়ান বলেন, “আমার ছেলে মোবাইল চুরি করেছে এই সন্দেহে অনেকজন মিলে মেরেছে। চেন দিয়ে ছেলের হাত পা বেঁধে রড, লাঠি দিয়ে মেরেছে। মেলার মালিকের কর্মচারীরা মিলে মেরেছে। ছেলেটা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। ওকে ছাড়াতে গেলে আমার মাথা বাঁশ দিয়ে ফাটিয়ে দিয়েছে। আমি বিচার চাই।”
ওই যুবককে বেঁধে মারধরের ঘটনার কথা স্বীকার করে নেন নাগরদোলা মালিক ও একজন কর্মচারী। কর্মচারি রাজেশ সাউ বলেন, “মোবাইল চুরি করতে এসে হাতেনাতে ধরা পড়ায় যাতে পালাতে না পারে, সেজন্য হাতটা বেঁধে দুচারটে চড়-থাপ্পর দেওয়া হয়েছে। ইলেকট্রিকের শক দেওয়ার অভিযোগটি ঠিক নয়।” নাগরদোলার মালিক কার্তিক ঘোষ বলেন, “আমি লজে ছিলাম। ভোর ৩টে নাগাদ ঘটনা ঘটেছে। কাল রাতে মোবাইল চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে রাস্তা থেকে ধরে এনে চড় থাপ্পর দিয়েছে। মোবাইলটাও ওর থেকেই পাওয়া যায়। আমি সকাল ৬ টায় আসি তখন পর্যন্ত বাঁধা ছিল। তবে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়নি।”
গণধোলাইয়ের এই ঘটনায় নিন্দায় মুখর হয়েছেন ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সমরজিৎ হালদার, “যদি সত্যি-সত্যিই চুরি করে থাকে, তার জন্য কোর্ট আছে, থানা আছে। নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। যারা এই অমানবিক আচরণ করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।” কয়েকজনকে আটক করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।