নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: গত বছরও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অসুস্থতা গুরুতর আকার নিয়েছে, কিন্তু দুর্বল হননি তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুরোধ করেছিলেন, ভালো কোনও বাসভবনে উঠে যাওয়ার জন্য। তখনও মাথা নেড়েছেন। আর সেই ৫৯ নম্বর পাম অ্যাভিনিউয়ের দু’কামরার সরকারি আবাসনের ফ্ল্যাট থেকেই যাত্রা শেষ করলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। রাজ্যের বাম সরকারের শেষ মুখ্যমন্ত্রী। অন্তিম সেনাপতি। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২০তে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায়। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজ্য তথা দেশের রাজনৈতিক মহলে। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই হতেই তাঁর বাসভবনে ভিড় করেন রাজনৈতিক নেতা, শিল্পী সহ অগুনতি সাধারণ মানুষ। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জ্যোতি বসুর পর রাজ্য প্রশাসনের ব্যাটন উঠেছিল তাঁর হাতে। পরিবর্তন চেয়েছিলেন তিনি। প্রশাসনে। তাই কৃষির পাশাপাশি শিল্পকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন বাংলাকে। পরিবর্তন চেয়েছিলেন দলেও। তাই ডাক দিয়েছিলেন ‘শুদ্ধিকরণে’র। বলেছিলেন, মাথা নিচু করে মানুষের কাছে যেতে হবে। কারণ, মানুষের থেকে বামপন্থীদের দূরে সরে যাওয়ার প্রবণতায় সিঁদুরে মেঘ দেখেছিলেন তিনি। অনিল বিশ্বাসের প্রয়াণের পর ভেবেছিলেন, তাঁর ভাবনা বদল আনবে কাঠামোয়। কিন্তু হয়নি। বাম শাসনের পতনের দায় মাথা পেতে নিয়েছেন বুদ্ধবাবু। সিপিএমের কর্তারাও তাঁর নীতিগত ব্যর্থতাকে সামনে রেখেই দাগমুক্ত থেকেছেন। আর বুদ্ধদেববাবু? সরে গিয়েছেন অন্তরালে।
আবাসনের পাঁচিল ঘিরে টাঙানো লাল পতাকা ছিল অর্ধনমিত। গেটে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পুরনো একটি ছবি। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম, গৌতম দেব, রবীন দেব, প্রদীপ ভট্টাচার্য, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ, চৈতি ঘোষাল প্রমুখ। বুদ্ধদেববাবুর প্রতি অন্তিম শ্রদ্ধায় এদিন সরকারি দপ্তরগুলোতে পূর্ণদিবস ছুটি ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ, শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চক্ষুদান করেছিলেন এই বামপন্থী নেতা। তাই এদিনই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিত্সকরা চক্ষুদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। বেলা ১টা নাগাদ বুদ্ধবাবুর মরদেহ নিয়ে পিস ওয়ার্ল্ডের উদ্দেশে রওনা দেওয়া হয়। সিপিএমের তরফে জানানো হয়েছে, আজ, শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর মরদেহ পিস ওয়ার্ল্ড থেকে বিধানসভা ভবনে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর ১২টা থেকে সওয়া ৩টে পর্যন্ত সিপিএম রাজ্য দপ্তর মুজফফর আহমেদ ভবনে রাখা হবে মরদেহ। সাড়ে তিনটে থেকে দীনেশ মজুমদার ভবনে মিনিট ১৫। সেখান থেকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে শোকমিছিলের মাধ্যমে শেষযাত্রা। সেখানেই দেহদান।
অবশেষে পাম অ্যাভিনিউ ছেড়ে গেলেন বুদ্ধবাবু। সঙ্গে গেল তাঁর সেই সাদা অ্যাম্বাসাডর। থেকে গেলেন স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য, সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্য আর অগনিত কমরেড। আর তাঁর সততা। বাম পতনের পরও ওই শ্বেতশুভ্র ধুতি-পাঞ্জাবিতে এতটুকু দাগ লাগেনি।