• আমার প্রতিবেশী... মতপার্থক্য শুধুই ছিল রাজনীতির ময়দানেপ্রদীপ ভট্টাচার্য  (কংগ্রেস নেতা) 
    বর্তমান | ০৯ আগস্ট ২০২৪
  • ১৯৭২ সালের গোড়ায় ৫৯ নম্বর পাম অ্যাভিনিউয়ের ‘এ’ ফ্ল্যাটে আসি। আমি তখন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য। ১৯৭৬ সালে আমরা রাজ্যের সরকার থেকে ক্ষমতাচ্যুত হই। তারপর আনুমানিক ১৯৮২ কিংবা ’৮৫ সাল হবে, তখন পাম অ্যাভিনিউয়ের ওই বাড়িতে আসেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। একই কমপ্লেক্সে আমরা থাকতাম। গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকতেন বুদ্ধদেবাবু। আমি থাকি উপরে। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মত পার্থক্য থাকলেও, সামাজিক সম্পর্ক ছিল অবিচ্ছেদ্য। আমার একবার চিকেন পক্স হয়েছে। হঠাৎ দেখি, আমার ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছেন বুদ্ধদেববাবু। নিজেই ভিতরে এলেন। আমি বললাম, আমার তো চিকেন পক্স হয়েছে, এখানে বসবেন? উত্তরে তিনি জানান, আমারও দু’বার হয়ে গিয়েছে। 

    প্রতিবেশী বুদ্ধদেববাবুকে সবসময় দেখেছি, সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে। তৎকালীন সময়ে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক ভালো ছিল না। বিরোধ তুঙ্গে উঠেছিল। কিন্তু সামাজিক পরিসরে কখনও সেই তিক্ততা আমাদের মধ্যে হয়নি। প্রতিবেশীকে নিয়ে কখনও কোনও অসন্তোষ হয়নি। একই কমপ্লেক্সে থাকবার ফলে যাতায়াতের পথে বহুবার দেখা -কথা হয়েছে। আমিও তাঁর বাড়িতে গিয়েছি বহুবার। অসুস্থ হয়ে যখন শয্যাশায়ী, তখন একাধিকবার তাঁকে দেখতে গিয়েছি, কথা হয়েছে, শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছি। আমার পরিবার সম্পর্কেও খোঁজখবর নিতেন তিনি। একেবারে সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। আমি অনেকবার দেখেছি, প্রতিবেশী, পাড়ার লোকজনদের সঙ্গে যাতায়াতের পথে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেববাবুর সাক্ষাৎ হয়েছে, কথাবার্তাও হচ্ছে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য যে সামাজিক বৈরিতা তৈরি করতে পারে না,  পাম অ্যাভিনিউয়ের ৫৯ নম্বর বাড়িটা তার উজ্জ্বল প্রমাণ। 

    অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর একেবারেই ঘরের বাইরে বের হতেন না তিনি। হাতেগোনা কিছু মানুষ তাঁর কাছে যেতে পারতেন। তিনিও হইহট্টগোল পছন্দ করতেন না। তবে রাজনীতির প্রতিদিনের খবর তাঁর নখদর্পনে থাকত। এখানে উল্লেখ করার মতো ঘটনা, পার্ক সার্কাস ময়দানের সেই ঐতিহাসিক সভা। তখন সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতা হয়েছে। রাহুল গান্ধী পার্ক সার্কাস ময়দানে সভা করতে আসছেন। সবাই চেয়েছিল, বুদ্ধদেববাবু যাতে ওই সভায় আসেন। সে ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম, উনি রাজিও হয়েছিলেন। আমিই তাঁকে পাম অ্যাভিনিউ থেকে পার্ক সার্কাস ময়দানের সভায় নিয়ে এসেছিলাম। 

    রাহুল গান্ধী ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বিশাল এক মালায় একসঙ্গে আবদ্ধ, একমঞ্চ থেকে ভাষণ, ‘ল্যান্ডমার্ক’ হয়ে রয়েছে বাংলার রাজনীতিতে।
  • Link to this news (বর্তমান)