‘বুদ্ধদাকে জানাতে পারিনি’, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব থাকলেও সমালোচনায় নারাজ সুশান্ত ঘোষ
প্রতিদিন | ০৯ আগস্ট ২০২৪
মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন একাধিক বিষয়ে মতপার্থক্য, পার্টির অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব। কিন্তু আজ, বিদায়বেলায় সমস্ত সমালোচনার ঊর্ধ্বে তিনি। এমনই মনে করছেন একদা বিরোধী অবস্থানে থাকা কঙ্কালকাণ্ডের নায়ক হিসেবে তকমা পাওয়া গড়বেতার সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষ। বাম জমানার শেষ সেনাপতির প্রয়াণে স্মৃতিচারণা করলেন তিনি। শুনলেন বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত।
মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বা তার পরবর্তীতে বিভিন্ন ইস্যুতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর (Buddhadeb Bhattacharya) সঙ্গে আমার মতপার্থক্য হয়েছে। নন্দীগ্রাম (Nandigram) বা জঙ্গলমহল নিয়ে সমালোচনাও করেছি। কখনও পার্টির অভ্যন্তরে। আর কিছু আমার লেখা বইতে নথিবদ্ধ রয়েছে। তবে পার্টির অভ্যন্তরে যা বলেছিলাম, তা কখনও প্রকাশ্যে বলব না। বলাটা পার্টি বিরোধী কাজ। একজন শৃঙ্খলাপরায়ণ পার্টি কর্মী হয়ে তা করব না। তবে সবই পার্টির (CPM) ডকুমেন্টে নথিবদ্ধ রয়েছে। আর একটা কথা বলি। একজন মানুষের মৃত্যুর পর তিনি সব সমালোচনার উর্ধ্বে চলে যান। তখন সমালোচনা সমীচীন নয়। শিষ্টাচার বিরোধী। আজ এটুকুই বলতে পারি, উনি ছিলেন যুব সমাজের কাছে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। বুদ্ধদা রাজ্যের মানুষের সঙ্গে আমাদেরও স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন। আজ দেশ ও রাজ্য রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে সেই স্বপ্ন দেখা নিমেষে উবে গেল। যুব সমাজকে আবার স্বপ্ন দেখাতে পারবেন এমন মানুষ কবে আসবেন সেই অপেক্ষায় আমাদের থাকতে হবে।
আজ ভালো-মন্দ অনেক কিছু মনে পড়ছে। তখন প্রথমবার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছি। বয়স অনেকটাই কম। নতুন কিছু করে দেখানোর তাগিদ ছিল প্রবল। কিন্তু প্রথম প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে কিছু বলার সাহস ছিল না। ভরসা ছিলেন দপ্তরের পূর্ণমন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী (Subhas Chakraborty)। তিনি অনেকদিন আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আমার বক্তব্য সুভাষদাকে বলতাম। তিনিই বুদ্ধদাকে আমার বক্তব্য নিজের বলে চালিয়ে দিতেন। আর তাঁর মতামত নিয়ে আমাকে জানিয়ে দিতেন। পরে সেই ভয় কেটে যায়। নিজের কথা নিজেই বলতাম। সবসময় সম্মতি দিতেন, এমনটা নয়। তবে মন দিয়ে শুনতেন।
দলের কাজকর্ম নিয়ে সরাসরি কথা বলার তেমন সুযোগ ছিল না। কারণ আমি তখন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। যা জানাতে হতো, তা হলো সেসময় জেলার রাজ্য কমিটির সদস্যদের মারফত। আর রাজ্য থেকে জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃত্বের মাধ্যমে। অনেক সময় বিভিন্ন ইস্যুতে পার্টি ও প্রশাসনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমার মতের অমিল হয়েছে। কিন্তু সরাসরি বুদ্ধদাকে জানাতে পারিনি। তবে আজ অনেক কিছু মনে পড়ছে। তার সবটা বাইরে বলার জন্য নয়।
এটুকু বলতেই পারি, বুদ্ধদা রাজ্যে শিল্পায়নে যে জোয়ার আনতে চেয়েছিলেন তা অনেক বছর আগেই অতীত হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। একজন সৎ ও সাংস্কৃতিবান মানুষের চলে যাওয়াটা কতখানি ক্ষতি, তা ভবিষ্যত প্রজন্ম উপলব্ধি করবে।