২০০৩ সালে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট মেঘবতী সুকর্ণপুত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে আমি বাংলাদেশ সফরে যাই। ওই দলে আমি ছিলাম একমাত্র বাঙালি সদস্য। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একজন বাঙালি শিল্পপতিকে দেখে অনেকে অবাক হয়েছিলেন। বাংলার কিছু খবরের কাগজে আমাকে নিয়ে সে সময়ে লেখালেখি হয়। সেগুলো পড়ে বুদ্ধবাবু আমার সম্পর্কে খোঁজখবর নেন।বাংলাদেশ সফর শেষ করে আমি কলকাতায় এলে বুদ্ধবাবুর প্রাইভেট সেক্রেটারি শৈলেশ মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে একদিন ফোন পাই। তিনি আমাকে বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান। কাল বেলা ১২টায় মহাকরণে চলে আসুন।’ পরেরদিন মহাকরণে প্রথম সাক্ষাতেই মুখ্যমন্ত্রী আমাকে বলেন, ‘আপনি তো একজন বাঙালি। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট আপনাকে নিয়ে ঘুরছেন। এবার বাংলার জন্য কিছু করুন।’
এরপর ওঁর সঙ্গে বহুবার সাক্ষাৎ হয়েছে। যখনই দেখা হতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প করতেন। সেই সুবাদে ওঁকে যতটুকু চিনেছি তাতে আমার মনে হয়েছে, উনি খুবই বিচক্ষণ মানুষ। কোনও দিন হয়তো টাই ছাড়া শুধুমাত্র একটা কোট পরে দেখা করতে গিয়েছি। সেটা দেখে উনি বলতেন, ‘হয় সাহেব, নয়তো বাঙালি হোন। মাঝে মধ্যে রবীন্দ্রনাথের বই উপহার দিয়ে বলতেন, আপনার জন্য সংগ্রহ করে রেখেছি। এটা পড়বেন।’
রবীন্দ্রনাথের উপর বুদ্ধবাবুর ডিপ নলেজ ছিল। গল্প করার সময়েও বারবার রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ টেনে আনতেন। কোনও কোনও দিন টানা দেড়-দু’ঘণ্টা গল্প করতেন। তা দেখে লোকেরা ভাবত, হয়তো বিজনেসের ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু উনি বিজনেসের থেকেও সাহিত্য নিয়ে বেশি আলোচনা করতেন। গল্প করার সময় রাইটার্সের চা-বিস্কুট ছাড়া ওকে আর কিছু খেতে দেখিনি। তবে ওই চা-টা আমি বেশি খেতে পারতাম না।
একবার আমরা জাকার্তা গিয়েছিলাম। ফেরার সময়ে আমাকে বললেন, পশ্চিমবঙ্গে ভালো একটা গল্ফ কোর্স বানান না। এ বিষয়ে ওঁর ইন্টারেস্ট দেখে আমি একটা গল্ফ কোর্সে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে বসে উনি একটার পর একটা কবিতা পড়ে গেলেন।