• আমার বাড়ি থেকেই চুরি যায় বুদ্ধদার সেই পাঞ্জাবি
    এই সময় | ০৯ আগস্ট ২০২৪
  • অশোক ভট্টাচার্য (প্রাক্তন মন্ত্রী)

    বুদ্ধদাকে নিয়ে যাই বলি না কেন, কম বলা হবে। এমন একজন সাদাসিধে জীবনযাপন করা লোক, অথচ সবদিক থেকেই উনি ছিলেন অসাধারণ। সব সময়ে সহকর্মীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস জোগাতেন। বক্তৃতার সময়ে কখনও একটা খারাপ শব্দ উচ্চারণ করতেন না। উত্তরবঙ্গ এবং এখানকার মানুষদের নিয়ে ওঁর ভীষণ আগ্রহ ছিল বুদ্ধদার।গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের সময়ে উনিই প্রথম বলেছিলেন যে, রক্তপাতে এই লড়াইয়ের সমাধান হবে না। রাজনৈতিক এবং আদর্শগত দিক থেকে লড়াই করতে হবে। সেই কারণেই নেপালি ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের পক্ষে আমরা সরব হই। ‘রাজবংশী’ কোনও পৃথক ভাষা কি না সেই সংশয় দূর করতে একটা বিশেষজ্ঞ কমিটিও গড়েছিলেন।

    বুদ্ধবাবুর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় কলকাতায় যুব ফেডারেশনের প্রথম সম্মেলনে। সেটা হয়েছিল ১৯৬৮ সালে কলকাতার ত্যাগরাজ হলে। আমি তখন এসএফআই করি। পরে যুব ফেডারেশনের কাজে মাঝে মধ্যেই শিলিগুড়িতে আসতেন। এলে আমার বাড়িতে থাকতেন। বহু রাতও কাটিয়েছেন। আমার স্কুটারের পিছনে চড়ে পার্টি অফিসেও গিয়েছেন।

    পরে তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী হয়ে রাজ্যে সুস্থ সংস্কৃতির পক্ষে আন্দোলন গড়ে তোলেন। আমি যখন মন্ত্রী হলাম তখন দেখেছি, সহকর্মীদের তিনি অত্যন্ত স্বাধীনতা দিতেন। বলতেন, সব বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার দরকার নেই। বুদ্ধদার সবচেয়ে বড় গুণ ছিল রাজনৈতিক সততা। কারও সম্পর্কে খারাপ শব্দ উচ্চারণ করতেন না। উত্তরবঙ্গের প্রতি ওঁর ভালোবাসা আমায় সব সময়ে কাজ করার উৎসাহ জুগিয়েছে। অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন ছিল বুদ্ধদার।

    কলকাতায় যাওয়ার সময়ে উনি বলতেন, কিছু কমলালেবু নিয়ে এসো। জলপাইগুড়িতে গেলে বোরোলি মাছ খেতে চাইতেন। ব্যস! আর কোনও খাবারের প্রতি কখনও কোনও টান দেখিনি। একটা ব্যক্তিগত বিষয় মনে পড়ে যাচ্ছে। একবার আমাদের বাড়িতে এসে রাতে ছিলেন। একটাই পাঞ্জাবি পরে এসেছিলেন।

    সেটা জানালার পাশে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। রাতে পাঞ্জাবিটা চুরি হয়ে যায়। পরদিন সকালে আমার একটা পাঞ্জাবি পরে উনি কলকাতায় ফেরেন। সৌরভেরও আমার মাধ্যমেই বুদ্ধদার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। পরে সেই ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।
  • Link to this news (এই সময়)