• কালনার তাঁতশিল্পী জ্যোতিষের জামদানিতে মুগ্ধ সোনিয়া গান্ধী থেকে নীতা আম্বানিরা
    বর্তমান | ০৯ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কালনা: সোনিয়া গান্ধী, নীতা আম্বানি থেকে মুম্বইয়ের টিনসেল টাউনের সেলিব্রেটি, কে নেই তাঁর খদ্দেরের তালিকায়। পুজোর আগে দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদের মতো শহরের নামী সংস্থার শোরুমের জন্য বরাত পেয়েছেন তিনি। তিনি এবং তাঁর সঙ্গে ৩৫ জন শিল্পী নাওগা খাওয়া ভুলে কাজ করে চলেছেন। তিনি জ্যোতিষ দেবনাথ। কালনার বারুইপাড়ার বিখ্যাত এই তাঁতশিল্পীর ঝুলিতে রয়েছে সান কবীর অ্যাওয়ার্ড থেকে শুরু করে নানা সম্মান। তাঁর তৈরি তিন-চারশো কাউন্টের শাড়ির দাম পড়ে পঞ্চাশ হাজার থেকে দেড়-দু’ লাখ টাকা। তিন-চারশো কাউন্টের মসলিন জামদানি শাড়ি বুনতে ধৈর্য ও দীর্ঘ সময় লাগে। তিনশো কাউন্টের একটি ১২ হাত শাড়ি বুনতে ও তাতে হাতে নকশা তুলতে সময় লাগে দুই থেকে তিন মাস। ভারী নকশার ক্ষেত্রে মজুরি পড়ে ৩০-৪০ হাজার টাকা। জ্যোতিষবাবুর কথায়, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে মসলিন তুলো এনে  চরকায় কেটে সুতো তৈরি হয়। সেই সুতো থেকে তৈরি হয় শাড়ি। তিন-চারশো কাউন্টের ৬ মিটার মসলিন জামদানি শাড়ির ওজন হয় একশো থেকে দেড়শো গ্রাম। উল্লেখযোগ্য শাড়ির মধ্যে রয়েছে মিনাকারি, কল্কা জামদানি, ঝুমকা জামদানি সহ এবারের স্পেশাল ঝুনা মসলিন জামদানি শাড়ি। দাম ডিজাইন অনুপাতে দেড় থেকে দু’ লক্ষ টাকা। এত দামের শাড়ি কারা কেনেন? উত্তরে জ্যোতিষবাবু বলেন, ভারতবর্ষ সহ বিদেশে থেকে বহু ধনি পরিবার তাঁর তৈরি শাড়ি কেনেন। এছাড়াও বহু নামী সংস্থাও তাঁর কাছ থেকে শাড়ি কেনেন। ইতিমধ্যে সোনিয়া গান্ধী, নীতা আম্বানি, রাধিকা, বিদ্যা বালন, কাজল, জয়া বচ্চন সহ মুম্বইয়ের অনেক সেলিব্রেটি তাঁর শাড়ি কিনেছেন। শাড়ির প্রদর্শনীতে অংশ নিতে তিনি পাড়ি দিয়েছেন জাপান, সিঙ্গাপুর, ইতালি, লন্ডন, স্কটল্যান্ড সহ বহু দেশে। তবে, শুধু শাড়ি নয়, মসলিন সুতোয় ওড়না সহ পিস তৈরি করেন। ওড়নার দাম তিন হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। ওজন ১০-২০ গ্রাম। তাঁত শিল্পীদের একাংশ বাজার নেই বলে হা হুতাশ করলেও জ্যোতিষবাবু তা মানতে চান না। তাঁর দাবি, ভালো শিল্পীর চাহিদা আজও রয়েছে। একজন ভালো শিল্পী মাসে ফুল টাইম কাজ করে ১৫-২০ হাজার টাকা রোজগার করেন। আবার অনেক মহিলা শিল্পী বাড়ির সংসারের কাজ করে দিনে পাঁচ-ছ’ঘণ্টা কাজ করে ছয়-সাত হাজার টাকা রোজগার করছেন। বর্তমানে তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ সহ ৬০ জন শিল্পী কাজ করছেন। কালনা দত্তদ্বাড়িয়াটন গ্রামে তিনি তৈরি করেছেন একটি মসলিন জামদানি ট্রেনিং সেন্টার। বারুইপাড়ার বাড়িতে রয়েছে আলাদা একটি কারখানা। তবে, প্রদর্শনী থেকে তাঁত শিল্পীদের নজরদারি সব ক্ষেত্রে পাশে পান স্ত্রী যুথিকা দেবনাথকে।

    স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে বাবার হাত ধরে তাঁত শিল্পে প্রবেশ জ্যোতিষবাবুর। বাবাও ছিলেন ভালো তাঁত শিল্পী। তবে, জ্যোতিষবাবু সাধারণ সুতোর শাড়ি বোনা থেকে মোড় ঘুরিয়ে চলে যান মসলিন জামদানির দিকে। আর তাতেই তাঁত ভাগ্য খুলে যায়। 

    সাতষট্টি বছরের জ্যোতিষবাবু বলেন, প্রথম দিকে ভেবেছিলাম এত দামের শাড়ির ক্রেতা পাওয়া যাবে কিনা। কিন্তু দুই-একটি শাড়ি বিক্রি হতেই চাহিদা বাড়তে থাকে। অর্ডার আসতে থাকে। এক সময় বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অর্ডার মিলত। এখন অনলাইনে ক্রেতারা সরাসরি যোগাযোগ করে আগাম বায়না করে শাড়ি কেনেন। শুধু দেশ নয়, বিদেশ থেকেও অনলাইনে অর্ডার আসে। বিদেশিরা বাড়িতেও আসেন। এবারও পুজোয় বেশকিছু শাড়ির অর্ডার রয়েছে। বেশি অর্ডার নেওয়া হয় না। কারণ একটি শাড়ি বুনতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগে।  সস্ত্রীক তাঁতশিল্পী জ্যোতিষ দেবনাথ।-নিজস্ব চিত্র  
  • Link to this news (বর্তমান)