• অনলাইন লোটোর ফাঁদে সর্বস্বান্ত পুলিস সুপারের দ্বারস্থ বহু পরিবার 
    বর্তমান | ০৯ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: অনলাইন লোটো গেমে প্রতি মাসে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে ৬০লক্ষ টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। খেলতে গিয়ে জলের মতো টাকা উড়িয়ে কেউ লরি, আবার কেউ জায়গা জমি বিক্রি করে ফতুর হচ্ছেন। সম্প্রতি লোটো কাউন্টারের বিরুদ্ধে পুলিস অভিযান শক্তপোক্ত করেছে। জোরকদমে ধরপাকড় চলছে। তারপরও এই সর্বনাশা গেম আটকানো যাচ্ছে না। কাঁথির বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় ৪০০জন বাসিন্দা গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে বুধবার জেলাশাসক ও পুলিস সুপারের কাছে এনিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। রাজেশ সাউ ও শেখ সাবির নামে দু’জন এই অনলাইন গেমের পান্ডা বলে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। বাইরের জেলা থেকে তারা পূর্ব মেদিনীপুরে টাকা লুটের জাঁতাকল পেতে রেখেছে। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী বলেন, পুলিসকে কড়া পদক্ষেপ নিতে বলেছি। অবৈধ এই কারবারে যুক্ত পান্ডাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ময়না, নন্দকুমার, খেজুরি, তালপাটিঘাট কোস্টাল, এগরা, পটাশপুর, ভগবানপুর, কাঁথি ও রামনগর সহ মোট ১১টি থানায় প্রায় ৭০টি অনলাইন লোটোর কাউন্টার রমরমিয়ে চলছে। ময়না থানার খেজুরতলা, শ্রীরামপুর পুরনো ঘাটগড়া, বাগের পুল, বলাইপণ্ডা বাসস্টপ এবং অন্নপূর্ণায় রাতদিন লোটো কাউন্টারে চলছে। ময়না থানার পুলিসের নজরে আনার পরও অভিযান হচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এই গেমে আসক্ত হয়ে জমি, বাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। 

    খেজুরি থানার কলাগেছিয়া, মালদা বাসস্টপ, বিদ্যাপীঠ বাজার, শ্যামপুর থেকে হিজলি যাওয়ার রাস্তার মাঝে বিভিন্ন জায়গায় ১০টির বেশি কাউন্টার রয়েছে। রামনগর থানার স্টেশন রোড, নিউ মার্কেট কমপ্লেক্স, দেউলিহাট বাজার, এগরার পানিপারুলে রমরমিয়ে লোটা কারবার চলছে। এছাড়া, ভগবানপুর থানার খামটি মোড়, নলদা বাজার, জলিবাড় এবং সরবেড়িয়ায় টাকা লুটের এই জাঁতাকল পাতা আছে।

    পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় প্রতিদিন পাঁচ কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়। শুধুমাত্র জুলাই মাসে ১৫৭কোটি টাকার মদ বিক্রি হয়েছে। প্রতিদিন বিপুল টাকার মদ বিক্রি হওয়ায় অনলাইন লোটো গেমের পান্ডাদের নজর পড়ে এই জেলার দিকে। কাঁথি মহকুমা এলাকা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় হওয়ায় জেলাজুড়ে কাউন্টার সংখ্যা হু-হু করে বাড়ে। কাঁথি থানার বাধিয়া গ্রামের শেখ ওয়াসিম লরির মালিক। সর্বনাশা এই অনলাইন গেমের মোহে পড়ে সেই লরি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। এগরার পানিপারুল এবং খেজুরির কলাগেছিয়ায় একাধিক ব্যক্তি সর্বস্বান্ত হয়ে জমি বিক্রি করে দিয়েছেন।

    পুলিস সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য অনলাইন লোটো গেমের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রতিটি থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তমলুক থানার নিকাশি বাজার, নন্দকুমার থানার খঞ্চি, কোলাঘাট থানার দক্ষিণ সাগরবাড় এবং এগরার পানিপারুলে অভিযান চালিয়ে ছ’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অসংখ্য জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু, বিপুল টাকার লোভে ঝুঁকি নিয়েও এই জেলায় রমরমিয়ে লোটো কাউন্টার চলছে। কম্পিউটারের যুগে নিজস্ব সফ্টওয়্যারে ইংরেজি কোডে ভাগ্য ঝুলে থাকে। কম্পিউটার স্ক্রিনে ভাগ্য পরীক্ষার এই খেলা থেকে মাসে অন্তত ৬০লক্ষ টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে বলে খবর। পুলিস সুপার বলেন, লোটোর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান চলছে। কাউন্টার চালানোর খবর এলেই অভিযান চালানো হচ্ছে।
  • Link to this news (বর্তমান)